ঈদযাত্রায় মহাখালী-বিমানবন্দর-টঙ্গী-গাজীপুর সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের বিমানবন্দর ও টঙ্গী অংশের র্যাম্প নির্মাণকাজ আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে সম্পন্ন করতে হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভায় এ সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখার উপায় খুঁজতে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সচিব বলেছেন, অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়ন হলে আগের মতো যানজট হবে না।
প্রতি বছরই নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও ঈদযাত্রায় বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত তীব্র যানজট হয়। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দিন পার হয়। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় ছয় বছর পর ২০১৮ সালে বিআরটির নির্মাণকাজ শুরুর পর যানজট নিত্যসঙ্গী হয়েছে এই সড়কের। সড়ক পরিবহন সচিব বলেছেন, ঈদের আগে বিমানবন্দরের সামনে র্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এটি চালু হলে যানজট কমবে।
এই র্যাম্প নির্মাণেই নিম্নমাণের সামগ্রী দিয়েছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। যা পরীক্ষায় দুই দফায় ফেল করে। ফলে বিআরটির ওভারপাসে এবং বাস ঘোরানোর লুপে ওঠার র্যাম্পটি ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হচ্ছে। গতকালের সভায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, র্যাম্পের জয়েন্ট এক্সপানশন নির্মাণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। আমিন উল্লাহ নুরী বলেছেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে সেতু বিভাগ সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
ঢাকা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সেতু বিভাগের কাছ থেকে সরঞ্জাম পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সোমবার বিকেলে পৃথক সভা হয়েছে। জয়েন্ট এক্সপানশনের বিশেষায়িত সরঞ্জাম প্রয়োজন। যা অর্ডার দিলে উৎপাদকরা বানিয়ে দেয়। ঈদের আগে পাওয়া গেলে র্যাম্পের নির্মাণ সম্পন্ন হবে। র্যাম্প ও স্টেশন বাদে বিআরটির বাকি কাজ শেষ। টঙ্গী-জয়দেবপুর অংশে বিআরটি করিডরের দুই পাশেই তিন লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বাড়লেও ওই সড়কে যানজট হবে না বলে দাবি করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গত ডিসেম্বরে তৃতীয়বারের মতো বিআরটির ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্প মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগেই ব্যয় ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এ বছরেই চালু হবে বিআরটি।
যানজট কমাতে ২০২১ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তেজগাঁও-আবদুল্লাহপুর অংশে ৩১ কোটি টাকায় ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ করে উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে যানজট আরও বাড়ে। আবদুল্লাহপুর ও জসীম উদ্দীন মোড়ের ইউটার্ন আগেই ভাঙা রয়েছে। বন্ধ রয়েছে তেজগাঁও ও নাবিস্কোর ইউটার্ন। বন্ধ ইউটার্নের কারণে যানজট হচ্ছে। তাই অব্যবহৃত ইউটার্নগুলো সরু করার আলোচনা হয় গতকালের সভায়। যদিও সড়ক পরিবহন সচিব বলেছেন, বিমানবন্দর এলাকায় আরও ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে। সেখানে ইউটার্ন ভালোভাবেই কাজ করছে। শুধু বিআরটি নয়, বিমানবন্দর এলাকায় তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল ও দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। তাই যানজট হচ্ছে। যানজট কমাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিমানবন্দর থেকে গাড়ি দুই সড়কে ভাগ হয়ে বের হবে।
ইউটার্ন কাজ করছে কিনা– গত বছর তা যাচাই করে উপকমিটি। এর সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেছেন, বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক প্রশস্ত হওয়ায়, সেখানে ইউটার্ন কাজ করছে। কিন্তু মহাখালী, নাবিস্কো ও তেজগাঁওয়ের অপ্রশস্ত সড়কে ইউটার্নে ঘুরতে যাওয়া গাড়ির কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চিন্তাভাবনা ছাড়াই ইউটার্নগুলো নির্মাণের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাস্তায় গাড়ি পার্ক না করা, সড়কের দুই পাশ দখলমুক্ত রাখা, গাজীপুর এলাকার শিল্পাকারখানা ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ায়সহ প্রতি বছরের গতানুগতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বছরেও। ঈদের আগে-পরে কয়েকদিন বিআরটির নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার।
আরো পড়ুন : সমকামী ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, খুন হয় স্থপতি ইমতিয়াজ