বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে নাটোর ও খুলনায় ব্যাপক সংঘর্ষ

ক্রাইম নিউজ জাতীয় প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

খুলনায় পুলিশের টিয়ার শেল, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে নাটোর ও খুলনায় ব্যাপক সংঘর্ষ

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে নাটোর ও খুলনায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। নাটোরে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপে বেশ ক’জন আহত হন। বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে নাটোরে। পুলিশ দু’পক্ষের মাঝখানে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে অবস্থান নেয়। খুলনায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১২ জন। আটক করা হয় ৫ জনকে। সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হয়।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে ঘিরে গুলিবর্ষণ, ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। দু’পক্ষের ইটপাটবেল নিক্ষেপে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতিসহ কয়েকজন আহত হয়েছে।

দু’পক্ষই দুই স্থানে সমাবেশ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান করে এবং মাঝখানে পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে অবস্থান করে।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর দু’টার দিকে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল নেতাকর্মীরা। সেখানে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, নাটোরকে উত্তপ্ত করতে ও বিএনপি’র কর্মসূচি পণ্ড করতে আওয়ামী লীগ এসব করছে। তারা বিরোধীপক্ষের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। তার বক্তব্য চলা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে তাদের শান্তি সমাবেশের জন্য শহরের উপশহর মাঠের দিকে রওনা হয়। অপরদিকে বিএনপি’র সমাবেশ চলায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিএনপি অফিসের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি’র কার্যালয়কে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা প্রতিরোধ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। দুলুর বাসার ছাদ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে। সংঘর্ষে নাটোর সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতিসহ শরিফুল ইসলাম শরিফ আহত হলে তাকে পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে পুলিশি বাধা পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় সমাবেশ করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রত্না আহমেদসহ অন্যরা। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের মিছিল লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নিজে গুলি করেছেন বলে তারা দাবি করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চুকে আটকের আল্টিমেটাম দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান।

এ ঘটনার পরপরই জেলা বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। এতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ হামলা করে ইটপাটকেট নিক্ষেপ করেছে। বাচ্চু বলেন, পুলিশের সামনে হামলা করেছে, তারা সবাইকে চেনেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশকে মনে রাখতে হবে তারা কোনো দলের কর্মী নন। তারা দেশের নিরাপত্তা কর্মী। অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ দাবি করেন, তাদের নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেট নিক্ষেপ ছাড়াও গুলি চালানো হয়েছে। এতে যুবদল নেতা রণি খন্দকার গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া তাদের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

এর আগে উপশহর মাঠে বিএনপি’র ইফতার মাহফিলের মঞ্চ ভাঙচুর হলে বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করে বিএনপি। তবে ওই মাঠেই শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করে আওয়ামী লীগ।

এ ব্যাপারে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ জানান, বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার খুলনা থেকে জানান, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে বিএনপি’র পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। সংঘর্ষের পর পুলিশ নগরীর কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি’র অফিস ঘেরাও করে রাখে। এতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাসহ শতাধিক নেতাকর্মী আটকা পড়েন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ১০ দফা দাবিতে দুপুর ২টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি ছিল। খুলনা থানার সামনে দিয়ে একটি খণ্ড মিছিল এই কর্মসূচিতে আসার সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। তখন পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশের হামলায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খুলনা মহানগর বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান মিল্টন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েত, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ ও রূপসা উপজেলা ছাত্রদলনেতা ইমতিয়াজ আহমেদসহ ১২ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী দাবি করেন, সারা দেশের মতো খুলনাতেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। পুলিশ বিনা কারণে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে বিএনপি’র ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খুলনা মহানগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট ও সাত রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

আরো পড়ুন : নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার ঊর্ধ্বে : জনগণের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *