অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারক মারা গেলে পরিবার যে গ্রস পেনশন পাবে, এর অর্ধেক সরকারের কাছে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি আনুতোষিক ও গ্রস পেনশনসংশ্লিষ্ট বিচারকের পরিবার পাবে অর্ধেক হারে। বৃহস্পতিবার এসব বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন ২০২৩-এর গেজেট জারি করা হয়।
গেজেটে বলা হয়, সহিংস ঘটনায় কোনো বিচারক (প্রধান বিচারপতি, বিচারক, অতিরিক্ত বিচারক) আহত বা নিহত হলে বছরে পেনশন পাবেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পেনশন ছাড়াও প্রধান বিচারপতি আনুতোষিক পাবেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পাবেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পাশাপাশি অবসরোত্তর একজন প্রধান বিচারপতি বিশেষ ভাতা হিসাবে প্রতিমাসে পাবেন ৭০ হাজার টাকা।
ওই আইনে ছুটির প্রাপ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিচারকরা অর্ধ গড় বেতনের ছুটি কর্মজীবনে সর্বোমোট ৩৬ মাসের বেশি ভোগ করতে পারবেন না। আর পূর্ণ বেতনের ছুটি কর্মজীবনের ২৪ ভাগের একভাগ ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া পূর্ণ গড় বেতনে এককালীন ৫ মাস এবং অন্য ছুটি এককালীন ১৬ মাসের অধিক পাওয়া যাবে না। আর পেনশনের টাকা শতভাগ তুলে নেওয়ার পর কেবল জীবিত থাকা সাপেক্ষে ১৫ বছর পর পুনরায় পেনশনের আওতায় আসবেন। আর অবসর গ্রহণকালে প্রাপ্য ছুটির মোট ১৮ মাস নগদায়ন করতে পারবেন।
সূত্রমতে, ১৯৮২ সালের অর্ডিনেন্স রহিত করে এ আইন গ্যাজেট আকারে জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, আইনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতা ২০২১ সালের ২৫ মে থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।
বিচারকরা অবসর গ্রহণের পর উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষের ভাতা পাবেন। পেনশনের অর্ধেক বা শতভাগ সরকারের কাছে সমর্পণ করতে পারবেন। তবে পেনশনভোগকালীন মারা গেলে পরিবার পেনশনের অর্ধেক সরকারের কাছে জমা বাধ্যতামূলক রাখতে হবে।
বিচারকদের পেনশনের শর্তে বলা হয়, কোনো বিচারক অন্যূন ৫ বছর পেনশনযোগ্য কর্মকাল শেষ করার পর যদি অবসর গ্রহণের বয়সসীমায় পৌঁছান বা অসুস্থতাজনিত কারণে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন, কিংবা শারীরিক, মানসিক অক্ষমতার কারণে চাকরি থেকে অপসারণ হন, সেক্ষেত্রেও তার পেনশন অনুমোদন হবে। এছাড়া কোনো বিচারক পেনশনযোগ্য কর্মকাল ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এবং অবসর গ্রহণের আগেই চাকরি থেকে পদত্যাগ করলেও তিনিও পেনশনের আওতায় আসবেন।
এছাড়া বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন না-এমন বিচারকের ক্ষেত্রে পেনশন হার পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারকের পেনশনযোগ্য কর্মজীবনের প্রথম ৫ বছরের সর্বশেষ উত্তোলনকৃত বেতনের আটভাগের পাঁচভাগ সমপরিমাণ অর্থ পাবেন পেনশন। আর পরবর্তী সময়ে প্রতি পূর্ণাঙ্গ কর্মকালীন বছরের জন্য বেতনের আটভাগের একভাগ সমপরিমাণ পেনশন প্রাপ্য হবেন। তবে এই পেনশনের অঙ্ক সংশ্লিষ্ট বিচারকের কর্মজীবনের সর্বশেষ উত্তোলনকৃত বেতনের বেশি হবে না।
গেজেটে আরও বলা হয়, বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ছিলেন-এমন বিচারকের ক্ষেত্রে পেনশন পাবেন সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী। এক্ষেত্রে পেনশনের জন্য গণনা করা হবে তার কর্মকালকে, বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে যেসব দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন, দায়িত্বে ধারাবাহিকতা পর্যায়ক্রমে গণনা হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কোনো বিচারক অবসর গ্রহণের পর মারা গেলে পরিবার যে পেনশন পাবে, এর অর্ধেক বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের কাছে সমর্পণ করতে হবে। এর বিনিময়ে যে সুবিধা দেওয়া হবে, সেটি হচ্ছে-সংশ্লিষ্ট বিচারকের পেনশনযোগ্য কর্মকাল ৫ বছরের নিচে হলে তিন মাসের বেতন সমান আনুতোষিক পাবে। আর পেনশনযোগ্য কর্মকাল ৫ বছরের বেশি হলে (অবসর গ্রহণকাল ৪০ বছর বা ৪৫ বছরের কম) প্রতি এক টাকার জন্য আনুতোষিক দেওয়া হবে ২৬০ টাকা, বয়স ৪৫ বছরের বেশি বা ৫০ বছরের কম হলে আনুতোষিক ২৪৫ টাকা এবং বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে আনুতোষিক ২৩০ টাকা হিসাবে গণ্য করা হবে।
ভবিষ্যতহবিল : বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন না-এমন বিচারকদের ক্ষেত্রে কর্মে যোগদানের তারিখ থেকে প্রযোজ্য বিধান মোতাবেক ভবিষ্যতহবিল সুবিধা পাবেন। আর জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের ক্ষেত্রে পূর্বের কর্মের ধারাবাহিকতায় এই সুবিধা পাবেন।
ছুটি প্রাপ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে কর্মজীবনে একবারের জন্য ৬ মাসের জন্য ছুটি পাবেন। তবে জমা রাখা ছুটির অধিক হলে তা অর্ধেক বেতন হারে গণ্য হবে। এছাড়া ছুটি থাকাকালীন কোনো বিচারক অর্ধ বেতনে ছুটিতে থাকলে তার নির্ধারিত মাসিক বেতন অর্ধ হারে হবে এবং পূর্ণ বেতনে ছুটি থাকাকালে মাসিক বেতন পূর্ণ হারে হবে। আর ছুটিকালীন তার বেতন হবে দেশীয় মুদ্রায়।
আরো পড়ুন : কামরাঙ্গীরচরে ব্যবসায়ী স্বামীর বিশেষ অঙ্গ কেটে সন্তানদের নিয়ে পালিয়েছেন স্ত্রী