প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্মৃতিবিজড়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার স্থানে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (এসসি) প্রাঙ্গণে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কার্যক্রম উদ্বোধনের পর যেখান থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়া ৬৯ জন আইনজীবীর নাম স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা আছে যে, তারা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন।’ তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতিমধ্যে তার কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করেছে এবং অনলাইনে মামলার কার্য তালিকা, রায় এবং মামলার বিবরণ রয়েছে। যার মাধ্যমে কেউ বিদেশে অবস্থান করেও তার মামলার বর্তমান পরিস্থিতি সহজেই জানতে পারবে।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা আইনি ব্যবস্থাকে একটি ‘স্মার্ট বিচার’ বিভাগে পরিণত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বিচার বিভাগকে স্মার্ট করার পথে বেশ এগিয়ে থাকায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেছে যা উল্লেখযোগ্যহারে মামলার বিশাল জট কমাতে সহায়তা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার সরকার দেশের সব আদালতে দরিদ্র ও অসচ্ছল বাদী-বিবাদীদের জন্য আইনি সহায়তা চালু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই সব ব্যবস্থা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সহজ করেছে।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের ‘রেকর্ড ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রকাশনা ‘আমাদের বিচারালয়’-এর মোড়কও উন্মোচন করেন। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজউদ্দিন ফকির।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যার বিচার করার মাধ্যমে তার সরকার অপরাধীদের রেহাই দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার করে দেওয়া রায়ের জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান, যার ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয় এবং গণতন্ত্রের পথ হয় মসৃণ। সেনানিবাসের দখলকৃত ক্ষমতা এই রায়ের মাধ্যমে জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
তিনি বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছে, ফলে এই রায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাধীনভাবে দেশের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও প্রশাসন পরিচালনা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত যে, সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করতে সেখানে (এসসি প্রাঙ্গণ) উপস্থিত হতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-স্নাতকদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার দেশে একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। তার সরকার ইতিমধ্যে আইনজীবীদের অফিসের জন্য এসসি প্রাঙ্গণে ১৫ তলা বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করেছে। আইনজীবীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এটি বাংলাদেশকেও আঘাত করছে, একারণে কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা যেন কখনই থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সমর্থন দরকার।’ তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আর্থসামাজিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রাধান্য পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : এবার গণতন্ত্র মঞ্চও রাজধানীর প্রবেশমুখে শনিবার অবস্থান করবে