খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সমস্যার শেষ নেই। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। নামকরণ বক্ষব্যাধি হলেও হাসপাতালটিতে বক্ষ সংক্রান্ত কোনো রোগের চিকিৎসা নেই। শুধু আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মাত্র চার জন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৫ সালে নগরীর মীরেরডাঙ্গায় ৭ একর জায়গার ওপর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নির্মিত হয়। ৫৮ বছর বয়সী হাসপাতালের ভবনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নামমাত্র কয়েক দফা সংস্কার করা হলেও কার্যকরী বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা হয়নি।
হাসপাতালের জরাজীর্ণ দ্বিতল ভবনের সবগুলো ওয়ার্ড ও রুমের ছাদের পস্নাস্টার খসে পড়ছে। ভবনের ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। রোগীদের জন্য টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্লাড, এক্সরে, ইসিজি ছাড়া অন্য কোনো রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই। বাকি পরীক্ষাগুলো রোগীদের বাইরে থেকে করাতে হয়। যা গরিব রোগীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। এসব কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে অনীহা বাড়ছে। ফলে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাও কমছে।
এদিকে, গত তিন-চার মাস আগে খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) হাসপাতালের ভবনটি মেরামত অনুপযোগী ঘোষণা দিয়ে ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। হাসপাতালের সাতটি আবাসিক ভবন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে হাসপাতালের নার্স ও স্টাফদের আবাসন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীদের ১৮৪ মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে জনবল আছে মাত্র ১২২ জন। শূন্য রয়েছে ৬২টি পদ। এরমধ্যে দুজন বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। তবে, মাত্র চার জন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই এ হাসপাতালে। হাসপাতালে নার্সের পদ রয়েছে ১১৪টি। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৮৬ জন। হাসপাতালটিতে তিন বেলা খাবারের জন্য রোগী প্রতি সরকারি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা; যা একজন রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ছয় মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ভর্তি করার দরকার নেই এমন রোগীদের দেখে আমরা কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিই।
তিনি বলেন, হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনগুলো মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) এসব ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আরো পড়ুন : দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে সৈয়দপুরে পাথরবিহীন রেলপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন