২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে আবারও সামরিক ব্যয় বেড়েছে। শুধু তা–ই নয়, গত বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল সবচেয়ে বেশি। আজ সোমবার প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।
সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হলেও বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। দেশগুলো তাদের অস্ত্রাগারে অস্ত্র বাড়িয়েছে। গত বছর বৈশ্বিক সামরিক খাতে ব্যয় দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক দিয়োগে লোপেজ ডি সিলভা এএফপিকে বলেছেন, ‘২০২১ সালে টানা সপ্তম বছরের মতো বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। এর আগে কোনো এক বছরে বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে দেশগুলোর যৌথ ব্যয় এত বেশি হতে দেখা যায়নি।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য দেশের তুলনায় যা অনেক বেশি। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৮০ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তবে বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
গত এক দশকে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ২৪ শতাংশ বেড়েছে এবং অস্ত্র সংগ্রহ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। তবে গত বছর দুটি খাতেই দেশটির ব্যয় কমেছে। তবে গবেষণা খাতে ব্যয় কমার বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা হয় না। এতে করে দেশটি যে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা উঠে এসেছে।
ডি সিলভা জানিয়েছেন, সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। ২০২১ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো দেশটির সামরিক ব্যয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। সামরিক ব্যয় রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ৪ দশমিক ১ শতাংশ, বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও যা অনেক বেশি।
এএফপি বলছে, তেল ও গ্যাস বিক্রি করে প্রচুর আয় করে রাশিয়া। সেই অর্থের কারণে দেশের সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। লোপেজ ডি সিলা যেমন বলেছেন, ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। আর চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ার বাহিনী।
গবেষকেরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা হওয়ার কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর আগে ওই সময় রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছিল।’
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে। এর পর থেকে ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৭২ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে দেশটির সামরিক খাতে ব্যয় কমে ৫৯০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। তবে এরপরও ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিটি) ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউরোপে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এতে করে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যান্য দেশও সামরিক খাতের ব্যয় বৃদ্ধি করছে। ন্যাটোর আটটি দেশ গত বছর জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করার লক্ষ্য পূরণ করেছে। তবে ২০২০ সালের সাত দেশ এ লক্ষ্য পূরণ করেছিল।
এসআইপিআরআইয়ের গবেষক লোপেজ ডি সিলভা আরও জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক খাতে ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পর সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। ২০২১ সালে দেশটি সামরিক খাতে ২৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ২০২১ সালে চীনে সামরিক খাতের ব্যয় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে টানা ২৭ বছর ধরে চীনের সামরিক খাত ব্যয় বেড়েছে।ৎ
চীনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বেইজিংয়ের আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে। ২০২১ সালে জাপান তাদের সামরিক ব্যয় ৭০০ কোটি ডলার অর্থাৎ, ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়েছে, ১৯৭২ সালের পর যা জাপানে সর্বোচ্চ। অপর দিকে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ডলার।
সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। ২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ভারত সামরিক খাতে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। যুক্তরাজ্য গত বছর দেশটির সামরিক ব্যয় ৩ শতাংশ বাড়িয়ে সৌদি আরবকে টপকে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। গত বছর সামরিক খাতে ৬ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার ব্যয় করে যুক্তরাজ্য। এদিকে গত বছর সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় ১৭ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন : একই তফসিলে কুমিল্লা সিটি, ৬ পৌরসভা ও ১৩৫ ইউপিতে ১৫ জুন ভোট