অর্থনীতি ডেস্ক : বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আরও বেশি কর্মী নিম্নমানে ও কম বেতনের চাকরি নিতে বাধ্য হবেন। এ ধরনের সব চাকরিতেই রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক সুরক্ষার অভাব। এ পরিস্থিতি কোভিড-১৯ সংকটের কারণে সৃষ্ট বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। গেল মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক ট্রেন্ডস ২০২৩ (ডব্লিউইএসও ট্রেন্ডস) এ ধরনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের হার বাড়বে মাত্র ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালের অর্ধেকেরও কম। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ বেড়ে দাঁড়াবে ২০ কোটি ৮০ লাখে। এ সংখ্যা বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বেকারত্ব বাড়বে মূলত উচ্চ আয়ের দেশগুলোয় শ্রমিক সরবরাহ ঘাটতির কারণে।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বেকারত্ব ছাড়া আরেকটি উদ্বেগের বিষয় চাকরির মান। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়ার অর্থ হলো অনেক কর্মীকে নিম্নমানের কাজ নিতে হবে খুব কম বেতনে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী সব কিছুর দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। সে অনুপাতে বাড়েনি শ্রম আয়। জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি আরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। আইএলওর প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের আরেকটি দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো বৈশ্বিক চাকরির ব্যবধান। এ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা কর্মসংস্থান চাইলেও সক্রিয়ভাবে চাকরির সন্ধান করছেন না। হয়তো তাদের চাকরি অনুসন্ধানে উত্সাহ নেই। গত বছর বৈশ্বিক চাকরির ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৪৭ কোটি ৩০ লাখে। এ সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ বেশি। শ্রমবাজারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে নারী ও তরুণ সমাজ। ২০২২ সালে বৈশ্বিক শ্রমশক্তিতে নারী অংশগ্রহণকারীর হার ছিল ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর পুরুষের হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫-২৪ বছর বয়সীরা উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পেলেও তা ধরে রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাদের বেকারত্বের হার প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। তরুণ সমাজের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মসংস্থান, শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছেন। আইএলওর মহাপরিচালক গিলবার্ট হংবোর উল্লেখ করেন, জরুরি ভিত্তিতে আরও শোভন কাজ দরকার। কিন্তু বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক সামাজিক চুক্তি করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
কর্মসংস্থানের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোয় কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ বা আরও বেশি। এর মধ্য দিয়ে এ দুই অঞ্চলে বেকারত্বের হার কমতে পারে সামান্য। আফ্রিকায় বেকারত্বের বর্তমান হার ৭ দশমিক ৪ এবং আরবে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার হতে পারে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৩ ও ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে প্রায় ১ শতাংশ বার্ষিক কর্মসংস্থান হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উত্তর আমেরিকায় কর্মসংস্থান হবে না বরং উল্লেখযোগ্য হারে কম হবে। বেকারত্ব বাড়বে অস্বাভাবিক হারে। ইউক্রেন সংকটে কঠিন সময় অতিক্রম করছে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার অর্থনীতি। তাই এ অঞ্চলে বেকারত্বের হার বাড়বে। ইউক্রেন সংকটে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চাপ উপ-অঞ্চলে জনসাধারণের আর্থিক এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে বলে মনে করছে আইএলও।
আরো পড়ুন : সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন সিড ও কিয়ারা।