নরসিংদী প্রতিনিধি: লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবিতে আব্দুল নবী (৩০) নামে এক বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বড়চর গ্রামের প্রয়াত হযরত আলীর ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মরদেহ উদ্ধারের খবর পায় পরিবার। এদিকে আব্দুল নবীর সঙ্গে একই ট্রলারে থাকার আশঙ্কা করা নরসিংদীর ১৩ যুবকের খোঁজ মিলছে না। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেলাব উপজেলার। আব্দুল নবীর মৃত্যুর খবরে তাঁদের বাড়িতেও শুরু হয়েছে আহাজারি।
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার আগে গত ২২ মে ওই যুবকদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সবশেষ কথা হয়। এর পর গত এক মাস ধরে তারা নিখোঁজ। বেলাব থেকে যাওয়া ৯ জন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে আলমের মাধ্যমে দেশ ছেড়েছিলেন।
আলমের মা রেহেনা বেগম জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেও ওই ট্রলারে ছিল। তারাও আলমের সঙ্গে এক মাস ধরে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সবশেষ কথোপকথনে আলম জানিয়েছিল, ইতালিগামী ট্রলারটিতে ১১৫ যাত্রীর মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়।
নিখোঁজদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন– বেলাব উপজেলার টান লক্ষ্মীপুর ও চর লক্ষ্মীপুর এলাকার বিল্লাল মিয়ার ছেলে সৈকত (২০), রহিম মিয়ার ছেলে আবু তাহের (২৭), রতন মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৯), আউয়াল মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল (১৮), ওবায়দুল্লাহর ছেলে রহমত উল্লাহ (২০), মোক্তার হোসেনের ছেলে জিহাদ (১৯) এবং কুলিয়ারচর উপজেলার বড় ছয়সুতি এলাকার বাছেদ মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭)।
শুক্রবার সকালে আব্দুল নবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশীরা এসে তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আব্দুল নবীর ভাই ও মা জানান, পাঁচ বছর সৌদি আরব থাকার পর চার মাস আগে বাড়ি ফিরেছিল আব্দুল নবী। এর পর দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ে। এক মাস আগে তাদের সঙ্গে ফোনে সবশেষ কথা হয়েছিল আব্দুল নবীর। এর পর আর যোগাযোগ হয়নি।
তাঁর বড় ভাই মাহ আলম বলেন, এর আগেও ইতালি যাওয়ার পথে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর বোটের তলা ফেটে যাওয়ায় ফিরে আসতে হয়েছিল। পরে দালাল আলমের অভিভাবকদের সঙ্গে গ্রাম্য সালিশে পাসপোর্ট ফেরত দিতে বলি; কিন্তু সে দেয়নি। জোর করে সে লোকগুলোকে নিয়ে যায়।
বেলাব উপজেলার টান লক্ষ্মীপুর, চর লক্ষ্মীপুর ও জালালাবাদ গ্রামের নিখোঁজ ৯ যুবকের পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই যুবকদের সঙ্গে তাদের সবশেষ ২২ মে কথা হয়। তখন তারা জানিয়েছিল, সমুদ্রপথে ইতালি পাঠানোর জন্য তাদের লিবিয়ার ‘গেম ঘর’ নামে একটি স্থানে নেওয়া হচ্ছে। এর পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
নিখোঁজ সৈকতের বাবা বিল্লাল মিয়া জানান, ট্রলার ছাড়ার চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই ইতালি পৌঁছানোর কথা। তবে প্রায় এক মাস ধরে ছেলের খোঁজ পান না। এর মধ্যে পাশের উপজেলার আব্দুল নবীর মৃত্যুর খবর পেলেন। তাঁর ছেলেসহ এলাকার অন্যদের ওই ট্রলারেই থাকার কথা। এ জন্য তাঁর সন্দেহ, সবাই ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হয়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, রায়পুরা থানার ওসি আজিজুর রহমান এবং বেলাব থানার ওসি তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, বিষয়টি তাঁরা কেউ জানেন না। খোঁজ নিয়ে জানবেন।
আরো পড়ুন : ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান গামছা পরিয়ে বিদায় করতে ইউএনওকে