ময়মনসিংহের ত্রিশালে ও মানিকগঞ্জ সদরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে ত্রিশালে বাসচাপায় ৫ পোশাক শ্রমিকসহ ৬ জন এবং মানিকগঞ্জে দুই নারীসহ ৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া উভয় জেলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গতকাল সকালে এই দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ও ত্রিশাল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের চেলেরঘাটে বাসের চাপায় কমপক্ষে ৫ জন গার্মেন্টসকর্মীসহ ৬ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার হদ্দেরভিটা গ্রামের আতিকুল ইসলামের মেয়ে জেসমিন আক্তার (৩০), উপজেলার নওপাড়া তালুকদার বাড়ির আব্দুল মোতালেবের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২৮), ময়মনসিংহ সদর চুরখাই জামতলী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে কামরুজ্জামান লিটন (২৮), ময়মনসিংহ গইণ্ডখোলা গ্রামের সোহেল মিয়া (৩২) এবং ঈশ্বরগঞ্জের মৃত মিয়া হোসেনের ছেলে আলতাব হোসেন (৬০) ও একজন মহিলা অজ্ঞাত রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শেরপুর থেকে ঢাকাগামী এসএস ট্রাভেলস (ঢাকা মেট্রো-ব ১২-০৫২৩) বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট নামক স্থানে চাকা পাংচার হলে বাসের যাত্রীরা অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সকাল পৌনে আটটার দিকে লাবিব গার্মেন্টেসের পোশাক শ্রমিকরাও ওই স্থানে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে রাসেল স্পিনিং মিলের রাব্বী-সেতু (ঢাকা মেট্রো-জ ১৪-১০০৪) পরিবহন দ্রুতগতিতে যাত্রীদের ওপর উঠে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত এবং ১১ জন আহত হন। পরে উপজেলা হাসপাতালে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহতদের পরিবারে আহাজারি: দিনমজুর স্বামীর সংসারে অভাবের কারণে কোলে সন্তান আসার পর তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৩ মাস আগে গার্মেন্টসে যোগ দিয়েছিলেন জেসমিন। বুধবার কর্মস্থলে যেতে মানা করেছিলেন স্বামী। কিন্তু আজকে বেতন দিতে পারে এমন কথা জানিয়ে কর্মস্থলের পথে রওনা দেন জেসমিন। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ফিরলেন লাশ হয়ে। ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের হদ্দেরভিটা গ্রামের মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২০)। ৬ মাস বয়সী রোজামনি নামের একটি মেয়ে রয়েছে এ দম্পতির। সকালে মেয়ের দাদি হালিমা খাতুনের কাছে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জেসমিন। নিহতের স্বামী মাহমুদুল হাসান বলেন- ‘আজকে ফজরের আজানের সময় জেসমিন আমারে ঘুম থেকে তুলে দেয়। আমি ওরে বলছিলাম আইজকা কারখানাত যাওনের দরকার নাই। আজকে বেতন দিতে পারে এই কথা কইয়া সে বাড়ি থেকে বের হইলো। কইছিলো বিকাল ৫টার মধ্যে আইয়া পড়বো। কিন্তু ও আইলো লাশ অইয়া। আমার মাইয়্যাডার অহন কি অইবো, মা ছাড়া কেমনে বাঁচবো’, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নিহতের বাবা আতিকুল ইসলাম মেয়ের মৃত্যুর খবরে ত্রিশাল থানা চত্বরে এসে আহাজারি করছেন। মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি পাগলপ্রায়, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায় যাত্রীবাহী লেগুনা (পিকআপ) ও আকিজ গ্রুপের একটি স্টাফ বাসের সংঘর্ষে দুই নারী ও চালকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায়। নিহত ৫ জনই লেগুনার যাত্রী ছিলেন। যাত্রীবাহী লেগুনাটি মহাসড়কের খাদের গভীর পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর গাড়িটি পুলিশের রেকার দ্বারা উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার ফলে মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রউফ সরকার দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জানান, সকাল ৮টার দিকে ঢাকা- আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের তরা বাসস্ট্যান্ড থেকে লেগুনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী পিকআপ মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিল।
পথিমধ্যে সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায় লেগুনাটি থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ পেছন থেকে একটি আকিজ গ্রুপের স্টাফ বাস (ঢাকা মেট্রো-স ১৪০৩০৮) লেগুনাটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় লেগুনাটি যাত্রীসহ পাশের খাদে পানিতে ডুবে যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর রেকার দিয়ে লেগুনাটি উদ্ধার করা হলে ঘটনাস্থল থেকে দু’জন নারী, লেগুনার চালকসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার যাত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা লেগুনার চালক আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাহিদ হোসেন (৩৪), আয়শা আবেদ ফাউন্ডেশনের কর্মী স্থানীয় বাগজান গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী হেনা আক্তার (৫০), একই গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম (৫৫) ও মানিকগঞ্জ শহরের মিষ্টির দোকানের কারিগর সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামের মৃত পরশ চন্দ্র মহাদেব চন্দ্র মদক (৫২)। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেয়ার পথে মুলজান গ্রামের মো. সজীবের ছেলে ব্যাংকার মো. মুসা। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচজনে।