স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ হত্যা করে কেউ সরকার উৎখাত করতে পারবে না। গতকাল গণভবনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে হত্যা করে সরকার উৎখাত করবে? মানুষ হত্যা করে আন্দোলন? আমি জানি না এই আন্দোলন করে কী পাবে তারা? তিনি বলেন, বিএনপি যে এই জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে। প্রতিদিন তারা অবরোধ আর হরতাল ডেকে যাচ্ছে। হরতাল-অবরোধ মানে কি কয়েকখান বাস পোড়ানো, গাড়ি পোড়ানো, যাত্রীসহ বাস পোড়ানো? শেখ হাসিনা বলেন, চাল যাচ্ছে, চালের গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে, ধান যাচ্ছে ধানের গাড়ি পোড়াচ্ছে। মানে মানুষকে ক্ষুধার্ত মারা। এই ঘটনা এর আগেও তারা করেছে ২০১৩ সালে। আমি জানি না তাদের কোনোমতে কেউ থামাতে পারবে কিনা।
এই মানুষ হত্যা করে সরকার উৎখাত তো করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি ঠিক জানি না, মানুষকে পুড়িয়ে মারার মধ্যদিয়ে কী আন্দোলন হয় সেটা আমার জানা নেই। আমরাও আন্দোলন করেছি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, আর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি যেন হয়, সেটা চিন্তা করে।
কিন্তু আমি এ রকম আন্দোলন দেখিনি। তিনি বলেন, এটা দেখেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে, তারা আমাদের এভাবে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। আর এখন দেখি ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের হামলা, হাসপাতাল রেহাই পায় না। হাসপাতালের ওপর পর্যন্ত তারা বোমা হামলা করে। ঠিক আমাদের দেশে যেন সেই চিত্রটাই দেখতে পাই। শেখ হাসিনা বলেন, যখন আন্দোলনের নামে এম্বুলেন্সের ওপর হামলা করা, পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে সেখানে এম্বুলেন্স পুড়িয়ে দেয়া, পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা, এ রকম বীভৎস ঘটনা বাংলাদেশে ঘটানো হচ্ছে। এটা নাকি আন্দোলন। তাহলে কার স্বার্থে আন্দোলন? গাজীপুরে রেললাইন কাটা এবং ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু চিন্তা করে দেখুন, কী রকম ধ্বংসাত্মক কাজ, এরা আন্দোলন না, রেললাইন ফেলে দিয়ে, প্রায় আটটা বগি পড়ে যায়, একজন মানুষ মারা যায়, কয়েকজন আহত। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তার মানে হচ্ছে রেলের বগি ফেলে দিয়ে মানুষকে হত্যা করা। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানুষ মারার জন্য রেললাইন উপড়ে ফেলে বা রেললাইন কেটে দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারার কল্পনা করে বা জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে এদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ বলে কিচ্ছু নেই। এটা জনগণকেই প্রতিহত করতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান সারা দেশের মানুষের প্রতি। তিনি বলেন, যারা রেললাইন কেটে দিয়ে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যার পরিকল্পনা করে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, আর পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে মারে, মিছিলে মেয়েদের ওপর অত্যাচার করে এদের ক্ষমা নেই। এদের শাস্তি একদিন পেতেই হবে। জনগণকে বলবো এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য।
ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা আওয়ামী লীগের নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে, সে ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার তো কোনো চেষ্টা আমাদের নেই। দেশের অগ্রগতিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ?উন্নয়নকাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি দেশের উন্নতি করছি। দেশের যে উন্নতি হয়েছে এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজকে বাংলাদেশটা বদলে গেছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তো হাওয়া ভবন নেই। কারও পাওনা দিয়ে ব্যবসা নিতে হয় না। ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারেন। অন্তত এটুকু সুযোগ আমরা করে দিয়েছি।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের আগস্টে নির্বাচিত ২০২৩-২০২৫ মেয়াদের জন্য নতুন কমিটির কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী এবং তিন সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার ও যশোদা জীবন দেবনাথ নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
স্প্যানিশ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশের যেকোনো খাতে স্পেনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হবে। বাংলাদেশে স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি অ্যাসিস বেনিতেজ সালাস গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে এলে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, সালাস তার দেশের কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক উদ্যোক্তা বাংলাদেশ সফর করতে এবং এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। স্পেনের হাসপাতাল ও কৃষি যন্ত্রপাতির মান খুবই ভালো। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত উভয়েই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্নাতক হওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্পেনের কাছ থেকে জিএসপি+ সুবিধা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ৬০ হাজার বাংলাদেশি স্পেনে কাজ করছে এবং তারা উভয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। প্রধানমন্ত্রী কপ-২৫ এ যোগ দিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদে তার সফরের কথা স্মরণ করেন। স্পেনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বিশেষ করে সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক ও নারী উন্নয়ন খাতে বাংলাদেশের নজিরবিহীন উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন করতে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি। স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন যার জন্য হতাহতের সংখ্যা খুবই কম ছিল। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন : হলফনামার তথ্যমতে সম্পদ ও অর্থ কয়েকশগুন বেড়েছে এমপি-মন্ত্রীদের