বিনোদন প্রতিবেদক : চিত্রনায়ক মান্নার পরিবার এবং ভক্তদের জন্য ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভয়ানক এক শোকের দিন। সেদিন যেমন মান্নাকে হারিয়ে শোকে ‘পাথর’ ছিল পুরো পরিবার, তেমনি পরদিন চারপাশের মানুষের বদলে যাওয়া দেখে শোক যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল পরিবারের সদস্যদের। সেই ঘটনা মান্নার স্ত্রী শেলী মান্নার কাছে মানসিক পীড়ন আর সংগ্রাম ছিল। তার ভাষায়, ‘পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকেই আমার চারপাশের অনেক স্বজনের মানবিক চরিত্রচিত্রের বদল ঘটেছিল।’
শেলী মান্না বলেন, ‘আমার স্বামীর এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়া আমাদের জন্য বিশাল শূন্যতা ও বিষণ্নতার। পরবর্তী সময়ে আমার কাছের অনেক স্বজনের দূরে সরে যাওয়া দেখে হতবাক হয়েছি। খুব কাছ থেকে অনেককে দেখেছি, দিনের পর দিন তাঁরা একসময় অচেনা হয়ে গেলেন। এ সময় আমি মান্নার কর্মকাণ্ড ঘিরে ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে সমর্পণ করি। কিংবদন্তি অভিনেতা, প্রযোজক মান্নার অগণিত ভক্তকুল, সিনেমাপ্রেমী স্বজন ও পরিবারের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল মান্না ফাউন্ডেশন গঠন নিয়ে। পরে আমরা ফাউন্ডেশন গঠন করি। সেখানেও একসময় সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি।’
তারপরে মান্নার রেখে যাওয়া কৃতাঞ্জলি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মকাণ্ডের হাল ধরেন শেলী। সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানেও আমি এক বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাঁদের বেড়াজালে পড়ে যাই। সম্মান বাঁচাতে বৈষয়িক অনেক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে লাগলাম। আমাকে শূন্যতা, বিষণ্নতা ও চরম পরিস্থিতি থেকে একবারে টেনে তোলার মতো কোনো স্বজন এগিয়ে আসেননি। যেমনটা আমি একসময় অনেকের অনেক সমস্যায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলাম। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। সেই সঙ্গে কাছের মানুষেরাও হয়ে যায় চির অচেনা।’
নারী হিসেবে সেই সংগ্রামে কখনো জয়ী হয়েছেন, কখনো একাকী সংগ্রামী নারী হিসেবে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যত বাধাই আসুক, মান্না ফাউন্ডেশন স্বজনহারা ও স্বজনবিহীন সংগ্রামী নারীদের নিয়ে কাজ করবে, একে অন্যের পাশে থাকবে। এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে শেলী বলেন, ‘এখন পারিবারিক, রক্তের বন্ধন ও সামাজিক বন্ধন অনেকাংশেই বিলুপ্তির পথে। আর এই বন্ধনকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়কে রোধ দরকার বলেই মান্না ফাউন্ডেশন কাজগুলো নিয়মিত করবে। “এসো মানববন্ধন গড়ি” শিরোনামে এখানে শিক্ষণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হবে। সেগুলো টেলিভিশন ও কৃতাঞ্জলির ডিজিটাল চ্যানেলে প্রকাশ পাবে।’
মান্না মারা যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন শেলী মান্না। সেসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু তারপরও চারপাশের কিছু মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁরাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন মান্না ফাউন্ডেশনকে নতুন রূপে পুনর্গঠন করার। অভিনেতা মান্নার স্মৃতি রক্ষার্থে এবং তাঁর কর্মকাণ্ড ও আদর্শকে ভক্তদের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর আগে মান্না ফাউন্ডেশনের অঙ্গসংগঠনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদেরও সংযুক্ত করা হবে উল্লেখ করে শেলী বলেন, ‘এবার আমরা মানবিক ও উদারমনা সংগঠকদের নিয়ে ফাউন্ডেশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশপ্রেম ও সংগঠনের কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত ভূমিকা থাকবে এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে।’
মান্না মারা যাওয়ার পর ২০০৯ সালের পয়লা বৈশাখে গঠন করা হয় মান্না ফাউন্ডেশন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশজুড়ে ২৪৫টি অঙ্গসংগঠন তৈরি হয়। শেলী বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালিয়ে যাই। পরে রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড কিছুটা থেমে যায়। এ ছাড়া আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিভাবক চাষী নজরুল ইসলাম ভাইসহ সাতজন মারা যাওয়ার পর আমরা আরও ভেঙে পড়ি। এরা সবাই ছিলেন মান্নাঘনিষ্ঠ।’
আরো পড়ুন : ১০ টাকায় গরুর মাংশ মেলে যে দোকানে