মেলানিয়া ও ইভানকা ট্রাম্পের অনুপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক জনপ্রতিনিধি পুরুষ প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি

নিউ ইয়র্কে আদালতে উপস্থিতি শেষে ক্যালিফোর্নিয়ার মার-এ-লাগোর বাসভবনে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এরপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন, নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, বিচারকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। আদালতে উপস্থিত হওয়ার সময়ে বা বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু মার-এ-লাগোতে ফিরে ভাষণ দেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন পরিবারের অনেক সদস্যই। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন না সাবেক ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা ট্রাম্প। এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, যে রকম অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সে কারণেই হয়তো মেলানিয়া বা ইভানকা ট্রাম্প এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। এই অভিযোগের মধ্যে আছে সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলস এবং প্লেবয় মডেল কারেন ম্যাকডোগালের সঙ্গে প্রতারণা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আগে গত সপ্তাহে একটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পিপল ম্যাগাজিনকে বলেছেন, মেলানিয়ার বয়স এখন ৫২ বছর।

তিনি নিজেই নিজের জীবনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মার-এ-লাগোতে তিনি সন্তুষ্ট আছেন। তবে বেশ ক্ষুব্ধ তিনি। স্টর্মি ডানিয়েলসের দেয়া হাস মানি হিসেবে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে কিছু শুনতে চান না। ওই সূত্রটি দাবি করেছেন, এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে ট্রাম্পকে এটা প্রত্যাশা করা হয়নি। তবে ট্রাম্পকে মেলানিয়া সমর্থন দিয়ে যাবেন। তিনি এটাই করে যাচ্ছেন। কারণ, তার একটা পরিবার আছে। অন্যরা বলছেন, তিনি মনোযোগ দিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী ব্যারোনের দিকে।

ওদিকে মার-এ-লাগোতে ফিরে ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেছেন, বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের অধীনে বিশ্ব সর্বাত্মক একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর আগে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের মধ্যে তিনিই প্রথম এমন অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন। তিনি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র লেজেগোবরে করে ফেলছে। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চীনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া। আপনারা এটা বিশ্বাস করতে পারেন? সৌদি আরব যোগ দিয়েছে ইরানের সঙ্গে। চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া ধ্বংসাত্মক একটি জোট গঠন করেছে। এমনটা তিনি নেতৃত্বে থাকলে কখনো হতো না। এমনকি ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারতো না রাশিয়া। যারা মারা গেছেন, তাদের জীবনকে রক্ষা করা যেতো। চমৎকার ওইসব শহরগুলো দাঁড়িয়েই থাকতো। ট্রাম্প বলেন, আমাদের মুদ্রা ভেঙে পড়ছে। শিগগিরই তা আর বিশ্বমানের থাকবে না। ২০০ বছরের মধ্যে এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় পতন। ওদিকে বিচারক মারচেন উভয় পক্ষকে সতর্কতার সঙ্গে শব্দ প্রয়োগ করতে অনুরোধ করেন। তা উপেক্ষা করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, তিনি মূলত আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বক্তব্য দিয়েছেন। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচন করতে চান ট্রাম্প। তিনি যখন মার-এ-লাগোতে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নিকে ‘ক্রিমিনাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিচারকদের ট্রাম্পবিদ্বেষী বলে অভিহিত করেন। বলেন, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি একজন ক্রিমিনাল। কারণ তিনি গ্রান্ড জুরিদের বিপুল পরিমাণ তথ্য অবৈধ উপায়ে ফাঁস করে দিয়েছেন। এ জন্য তার বিচার হওয়া উচিত। অথবা তার পদত্যাগ করা উচিত। এ সময় তার ৫ সন্তানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তিন জন। তারা হলেন- ডনাল্ড জুনিয়র, এরিক এবং টিফফানি। বড় মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প তার পিতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু বড়দিনের আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন অধ্যায়ের কোনো পার্ট নন তিনি।

শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তথ্য জনসমক্ষে প্রচার করায় বিরত থাকার নির্দেশ দেননি বিচারক। তবে ট্রাম্প যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে সহিংসতায় উস্কানি দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তিনি এই নির্দেশ দেবেন। সেটা দেয়া হলে ট্রাম্প এবং তার আইনজীবী টিম প্রকাশ্যে এই মামলা নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন না।

আদালত কক্ষে যা যা হলো এ এক নতুন ইতিহাস। এই প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে আদালত কক্ষে প্রবেশ করলেন সাবেক কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নিজেকে অবশ্য অপরাধী মনে করেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, এভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের অর্থ হচ্ছে গোটা জাতিকে অপমান করা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার আদালতে প্রবেশ করেন ট্রাম্প। এ সময় তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। ট্রাম্পের পরনে ছিল চিরপরিচিত নীল স্যুট আর লাল টাই।

বিবিসি জানিয়েছে, আদালত কক্ষের সামনের দিকে ট্রাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গার দিকে যখন তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তার চেহারা ছিল বিষণ্ন আর পদক্ষেপ ছিল ভারি। যেখানে তার আইনজীবীরা অপেক্ষা করছিলেন। আদালতের মধ্যে মাত্র পাঁচ ফটোসাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছিল। কেউ কোনো ভিডিও ধারণ করতে পারেনি। এই সাংবাদিকরাই জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প গোটা সময়ে তাদের সঙ্গে কখনোই কোনো কথা বলেননি। এমনকি অভিব্যক্তি বা শারীরিক ভাষার মাধ্যমেও কিছু প্রকাশ করেননি। ট্রাম্পই হচ্ছেন প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলো। বিচারক মার্চিন জানিয়েছেন, সামনের বছর জানুয়ারি মাস নাগাদ তার বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সামনের বছর যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়বেন ট্রাম্প, তখন তাকে আবার আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষতি হতে পারে, এমন তথ্য লুকাতে তিনি নকল কাগজপত্র তৈরি করেছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্নো ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। এই অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি আদালত থেকে সরাসরি ফ্লোরিডায় ফিরে যান।
সেখানে মার-এ লাগোর বাড়িতে ফিরে গিয়ে অভিযোগ করেন, এসব মামলার মানে হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা।

তবে আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্প একেবারেই শান্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫তলা নিচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠা-া একরকম সুরেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি। শুনানির সময় বেশির ভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি।

যখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়, তখন ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’। অর্থাৎ তিনি কোনো অভিযোগই মেনে নেননি। এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ট্রাম্প বলেন, হ্যাঁ। এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোনো অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন।
প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনানি শেষ করেন বিচারক। এরপর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ালে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। আইনজীবীদের সঙ্গে শান্তভাবে তিনি কথা বলছিলেন। তবে তার কয়েক সারি পেছনে বসে থাকা সাংবাদিকরা সেসব কিছুই শুনতে পাননি। এরপর তিনি ঘুরে আদালতের মধ্যে প্যাসেজে চলে যান এবং পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। বাইরে অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি। তার অভিব্যক্তি ছিল বেশ গম্ভীর।

ট্রাম্পের বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন বাইডেন
বিশ্বের চোখ এখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মামলার দিকে। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কীভাবে আত্মসমর্পণ করছেন, আদালতে কীভাবে উপস্থিত হয়েছেন কিংবা এ মামলা নিয়ে তিনি কী ভাবছেন- তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই মামলা নিয়ে কী ভাবছেন? এই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল সাংবাদিকদের মনে। হোয়াইট হাউসে তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যান।

বিবিসি জানিয়েছে, এসব প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন সরাসরি এবং বেশ সহজ ভাবেই ‘নো কমেন্ট’ বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ, তার ট্রাম্পের এই মামলা নিয়ে বলার কিছু নেই। হোয়াইট হাউস থেকে ৩৮৩ কিলোমিটার উত্তরে ট্রাম্প যখন আদালতে হাজির হয়েছেন, তখন বাইডেন তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টাদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যে নানা বিতর্ক দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলতেই তিনি তার উপদেষ্টাদের ডেকেছেন।

তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্প সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বাইডেনকে। তিনি তার সবগুলো প্রশ্নই এড়িয়ে যান। তবে বাইডেন যে এ নিয়ে কিছু বলবেন না তা আগেই নির্ধারিত হয়েছিল। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ট্রাম্পের মামলার বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এখনও এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাই কারও পক্ষেই এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন অন্য দিনগুলোর মতো আমেরিকান নাগরিকদের নিয়েই ফোকাস থাকবেন। তবে এমন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন সাংবাদিকরা। ফক্স নিউজের পিটার ডুকি পাল্টা প্রশ্ন করেন যে, হোয়াইট হাউস কি এটাই বুঝাতে চাচ্ছে যে, নিউ ইয়র্কে আসলে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই ঘটছে না?

আরো পড়ুন : বিএনপির নিজেদের ওপরই কোনো আস্থা নাই

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *