ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বুধবার মালয়েশিয়া নারী দলের কোচ জ্যাকব জোসেফ বলেছিলনে, ‘র্যাংকিং সব সময় কথা বলে না। ‘ মালয়েশিয়ান কোচের সেই মন্তব্য আজ মাঠের খেলায় প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে নিয়ে ছেলে-খেলায় মেতে ওঠে সাবিনা-স্বপ্নারা। গোটা ম্যাচ জুড়েই মালয়েশিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি গোলাম রব্বানী ছোটনের দল।
বৃহস্পতিবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি কামাল স্টেডিয়ামে মালয়েশিয়া নারী দলকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। জোড়া গোল করেছেন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় আঁখি খাতুন, একটি করে করেন গোল সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না, মনিকা চাকমা ও কৃষ্ণা রানী সরকার।
ফিফা র্যাংকিংয়ে মালয়েশিয়ার অবস্থান ৮৫তম আর বাংলাদেশের ১৪৬তম। অবশ্য র্যাংকিং আজ কথা বলেনি। বলতে গেলে কথা বলতে দেয়নি গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। টানা কঠোর অনুশীলনের কারণে এই ফল সেটি বলাই যায়। কমলাপুরের এই টার্ফেই যে সারা বছর অনুশীলন করে মেয়েরা। যার ফায়দা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া আজ যেন আক্রমণ করতেই ভুলে গেছে।
গত ১৪ জুন এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মালয়েশিয়ার কাছে ৪-১ গোলে হেরে এসেছে জামাল ভুঁইয়ারা। মেয়েদের এই জয় সেই হারে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে। বলতে গেলে প্রতিশোধ নিয়েছে। এর আগে একবারই মালয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ, সে ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল সাবিনারা।
৯ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিরেছে সেটা মাঠের খেলায় বুঝতে দেয়নি বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই মালয়েশিয়ার রক্ষণে হানা দেয় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মনিকা চাকমা বাড়ান সিরাত জাহান স্বপ্নাকে। এই ফরোয়ার্ডের কাট ব্যাকে সানজিদা খাতুনের শট আটকান গোলরক্ষক।
তৃতীয় মিনিটেই গোলেই সহজ সুযোগ নষ্ট করেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। সানজিদার নিঁচু ক্রসে গোলমুখ থেকে সাবিনার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। মালয়েশিয়ার রক্ষণে চাপ ধরে রেখে নবম মিনিটেই গোল তুলে নেয় বাংলাদেশ। মারিয়া মান্দার কর্নারে গোলরক্ষক আজুরিন বিনতে মাজলান ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে গোলমুখ থেকে আলতো টোকায় বাকি কাজ সারেন।
দ্বাদশ মিনিটে থ্রো ইনের পর প্রতিপক্ষের ভুল পাসে বল পেয়ে যায় বক্সে ফাঁকায় থাকা সানজিদা। তাড়াহুড়ো করে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। ছয় মিনিট পর সতীর্থের পাসে সানজিদার কোনাকুনি শট আটকান গোলরক্ষক, তার ফিরতি শটও যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে।
২৬ মিনিটে সাবিনার দারুণ গোলেই ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। ডান দিক থেকে স্বপ্নার পাস ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন সাবিনা খাতুন। একটু পরই আরেক গোলে ম্যাচে চালকের আসনে বসে যায় বাংলাদেশ। ছোট করে কর্নার নেওয়ার পর সাবিনা বক্সে লং পাস বাড়ান, দুই সতীর্থের কেউ হেড দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর আঁখি খাতুনের প্লেসিং শট ঠিকানা খুঁজে নেয়। ৩৬ মিনিটে প্রথমবার বাংলাদেশের রক্ষণে হানা দেয় মালয়েশিয়া কিন্তু পারেনি ভীতি ছড়াতে।
সতীর্থের ক্রসে নুর শাফিকা বিনতে জয়নালের শট যায় রুপনা চাকমার বরাবর। ৪২ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে সাবিনার শট ক্রসবারে না লাগলে ব্যবধান বাড়াতে পারত বাংলাদেশ। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগেই মালয়েশিয়ার জালে চতুর্থ বার বল পাঠায় বাংলাদেশ। মাসুরার লম্বা বল অফ সাইফ ফাঁদ ভেঙে আক্রমণে যায় সাবিনা, বক্সে ঢুকে অপর প্রান্তে থাকা স্বপ্নার দিকে ঠেলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফাঁকায় থাকা সিরাত জাহান স্বপ্না আরামসে বল জালে পাঠান। ৪-০ এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য বজায় রাখে মেয়েরা। আক্রমণের ধারা বজায় রেখে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। সে তুলনায় মালয়েশিয়া পারেনি কোনো সুযোগ তৈরি করতে। ৬৬ মিনিটে পঞ্চম গোলের দেখা পায় গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। বক্সের ভিতরে মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার টানা দুবারের শট ব্লক হয়, তৃতীয় প্রচেষ্টায় ঠিকই নিঁশানা খুঁজে নেন এই মিডফিল্ডার। সুযোগ সন্ধানী শটে বল জড়িয়ে দেন জালে।
৭৪ মিনিটে মালয়েশিয়ার জালে ষষ্ঠ বারের মত বল পাঠায় বাংলাদেশের মেয়েরা। রিতুপর্ণা চাকমার ক্রসে ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার হেডে দলকে বড় জয়ের দিকে নিয়ে যান। যদিও বাকি সময়ে আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি বাংলার মেয়েরা। আগামী ২৬ জুন মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা।
আরো পড়ুন : সিলেটের বিয়ানীবাজারে দাফনের জন্য মিলছে না সাড়ে তিন হাত মাটি