রাঙামাটির হৃদয়হরা পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালিতে মৌসুমে লাখো পর্যটকের ঢল নামে। উঁচু পাহাড়ের খাঁজে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এ পর্যটন কেন্দ্রে মেঘের খেলা দেখে অভিভূত হন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। পর্যটকের শোয়ার ঘরে মেঘ উঁকি দিয়ে যায় যখন তখন। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বিখ্যাত পর্যটন স্থল সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার মূল রাস্তা খাগড়াছড়ি হয়ে। রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেক দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রং বদলায়। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা সাজেক ভ্যালি এখন সবধরনের পর্যটকের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। পাহাড়ধস বা রাস্তাধসের কোনো ঝুঁকি না থাকায় মূলত সারা বছরই সাজেক যাওয়া যায়। সম্প্রতি পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬ বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি ঘুরে পর্যটন খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা চোখে পড়ে।
সাজেকের রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া মিলেই মূলত সাজেক ভ্যালি। এ দুটি পাড়ার অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যথাক্রমে ১ হাজার ৭২০ ও ১ হাজার ৮০০ ফুট। মেঘ আর পাহাড়ের লুকোচুরি দেখতে বছরের সব সময়ই পর্যটকরা বেড়াতে যান সাজেকে। ভোরে সূর্যোদয় দেখতে গিয়ে মনে হতে পারে, চারপাশে যেন অসংখ্য ঢেউ খেলানো নদী বয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রকৃতিতে এমন মেঘের খেলা খুব কম সময়ই দেখতে পাওয়া যায়। সাজেকে এটা নিত্যদিনের ঘটনা। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটির সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে হলেও খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। সাজেকে খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত সুবিধাজনক। সাজেকে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজ। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায় সবচেয়ে সুন্দরভাবে। পাহাড়ের সব সৌন্দর্য উজাড় করে পর্যটকের অপেক্ষায় থাকে সাজেক। পর্যটকের সেবায় সেখানে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁ। পাহাড়ি সংস্কৃতি, ব্যাম্বো চিকেন, ব্যাম্বো বিরিয়ানি, ব্যাম্বো চা-কফিসহ নানা আয়োজন নিয়ে পর্যটক সেবায় নিয়োজিত রেস্তোরাঁগুলো। শুধু সাজেক ভ্যালিই নয়, তিন পার্বত্য জেলায় অসংখ্য পর্যটন স্থাপনা রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এর মধ্যে আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনা, হর্টিকালচার সেন্টার, মায়াবিনী লেক, শতবর্ষী বটবৃক্ষসহ খাগড়াছড়ির অরণ্যঘেরা সবুজ প্রকৃতির টানে পর্যটকরা ছুটছে পাহাড়ের পথে। মাত্র ৫-৭ বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প। পর্যটকদের আগমনকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রিক হোটেল-মোটেল। বান্দরবানে পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজেই রয়েছে পর্যটনের মনোমুগ্ধকর স্পট। রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান। রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া। আছে সুপরিচিত পর্যটন স্পট নীলগিরি। এ ছাড়াও নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত, রিঝুকঝর্ণা, বগালেক, কেওকারাডংসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। প্রতি বছর পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন স্পট দেখতে আসেন কয়েক লাখ পর্যটক। মূলত বান্দরবানের অর্থনৈতিক অবস্থা আবর্তিত হচ্ছে পর্যটনকে ঘিরে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা কুটির শিল্প ও কৃষি খাতেও কর্মসংস্থান হয়েছে লাখ লাখ মানুষের। রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, রাঙামাটিসহ তিন জেলায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে ইকো ট্যুরিজমে বিনিয়োগ যায়। তবে আলাদা ঋণ সুবিধা না থাকায় সম্ভাবনা সত্ত্বেও পর্যটনে উন্নয়ন হচ্ছে না। ঋণের সুবিধা দিয়ে পরিকল্পিত ইকো ট্যুরিজম করা গেলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সাজেককে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। ৫১ একর জমিতে পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। জিপ লাইনিং, বোটিং ইত্যাদি গড়ে তোলা হচ্ছে। পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশে পাহাড়ে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সাজেককে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসে। ছুটির দিনে জায়গা পাওয়া যায় না। পর্যটকদের আবাসন সুবিধায় সাজেকে প্রায় দুই শতাধিক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। প্রচুর হোটেল রোস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা, পর্যটকদের যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
আরো পড়ুন : জেনে নিন কোনহেভিওয়েটদের মনোনয়ন বাতিল হল