নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫ সালের পর যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে সে কথা তারা বলতেও ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। মনে হয় যেন মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অপরাধ করেছেন। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী তারাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে।
গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের এমপি এ কে এম রহমতুল্লার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সংসদ নেতা বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান নিজেকেই নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে যখন ক্ষমতা দখল করে, এই যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার শুরু হয়েছিল, যারা অনেকেই তখন গ্রেফতার ও বন্দি ছিল তাদের মুক্ত করে দেয়। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তাই নয়, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ এবং ৩৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে এদের রাজনীতি করার সুযোগ এবং ভোটের অধিকার দেয়, উপদেষ্টা বানায়, মন্ত্রী বানায়। যারা জিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি ছিল না তাদের বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা না তাদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, ইতোমধ্যেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। এখন আর সে অবস্থা নেই। তিনি আরও বলেন, আমি যখন প্রথমবার সরকারে আসি তখন আমরা সেই যে রেড বুক সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ছিল, সেগুলোসহ অন্য যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের আমরা সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করি। আমার মনে আছে, আমি ৭২ হাজারের মতো সার্টিফিকেট সই করে দিয়েছিলাম, আমি নিজের হাতে সই করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই সার্টিফিকেট বাতিল ঘোষণা করে। অর্থাৎ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেওয়া এটা তারা দিতে চায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের একে একে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, সিভিল প্রশাসন যেখানেই যাকে পেয়েছে, একে একে হত্যা করেছে। যারা চাকরি করত, চাকরি থেকে তাদের বিতাড়িত করেছে, তাদের অপমান করেছে। এমনকি কেউ মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলে তারা চাকরিও পেত না। এমন এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে এদেশের ইতিহাসকেও বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। এটা হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের এটা প্রচেষ্টা থাকবে যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যাতে তালিকায় থাকে সেটা।
আমার ব্যর্থতা থাকলে খুঁজে বের করে দিন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যর্থতা থাকলে বিরোধী দলের সদস্যকে তা খুঁজে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সততা নিয়ে কাজ করলে কেন ব্যর্থ হতে হবে? সফলতা কী, ব্যর্থতা কী- এটা যাচাই করবে জনগণ। এটা যাচাই করা আমার দায়িত্ব নয়। মাননীয় সদস্যের যখন এতই আগ্রহ, তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দিন, আমি সংশোধন করে নেব।
জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রশ্নকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ব্যর্থতার কথা জানতে চান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, কোনটা সফল হওয়া, কোনটা বিফল হওয়া, সেটা নয়। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। দেশকে চিনেছি, জেনেছি। সরকার গঠনের পর তৃণমূলের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই আকাক্সক্ষা নিয়েই কাজ করেছি। তার সুফল এখন জনগণ পাচ্ছে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে যে আমূল পরিবর্তন সেটা আমরা বয়োবৃদ্ধ যারা আছি তারা জানি। কিন্তু আজকের প্রজন্ম জানবে না।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে উপযুক্ত নাগরিক তৈরি করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের উপযুক্ত নাগরিক তৈরি করতে হবে। গতকাল গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই আমাদের সোনার বাংলা গড়া বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।
দেশের স্কাউট সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের আত্মনির্ভরশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। এখন ২২ লাখ সদস্য আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ সদস্য করার টার্গেট নিতে হবে। স্কাউট-ই নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দেয়। এতে আধুনিক সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পরোপকারী হিসেবে সমাজসেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারী করোনায় তাদের আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। এই স্কাউট আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কাব স্কাউটসদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ করেন এবং তাঁর নিজের স্বাক্ষরিত সনদপত্র ১২ জনের হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান, জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং জাম্বুরি আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক ও জাতীয় স্কাউটদের জাম্বুরি চিহ্নিত করে একটি স্মারক ডাক টিকিটও অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
নয় দিনব্যাপী জাম্বুরিতে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং কানাডা থেকে ৮ হাজার স্কাউট, ১ হাজার ইউনিট নেতা এবং আন্তর্জাতিক পরিষেবা দলের সদস্যসহ মোট ১১ হাজার অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে।
মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হওয়া নয় দিনব্যাপী এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক স্কাউট ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির ৩২তম সমাবেশের গতকাল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আরো পড়ুন : সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা হেফাজতের