যেভাবেই হোক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি

নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে বিপরীতমুখী অবস্থানে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। অন্যদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল। সরকারের মিত্র এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মনে করে, এখন পর্যন্ত দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপরও আস্থা নেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। এরই মধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চলমান রাজনৈতিক এ সংকটের মধ্যেও ইসি’র ভাবনায় শুধুই নির্বাচন। যেভাবেই হোক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছে তারা। নির্বাচন কমিশন বলছে, নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ভোট করার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে তারা।

নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষের দিকে: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল ইসি। সে অনুযায়ী নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী বিধিতে সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজও শেষ। এখন হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত ২রা মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের তালিকা চূড়ান্ত করা আছে। এরপর যারা নিবন্ধিত হয়েছেন, তাদের যুক্ত করে সম্পূরক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। সারা দেশে ৪২ হাজার ৩৮০টি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এখন চলছে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। আগামী মাস থেকে শুরু হবে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর এই প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। এবার আগেভাগেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এবার ৩০০ আসনেই ভোট হবে কাগজের ব্যালটে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের তারিখ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ দিন হাতে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইসি’র হিসাব অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আর ১০০ দিনের মতো সময় আছে। কর্মকর্তারা আরও বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে বড়দিনের কাছাকাছি সময়ে ভোটের তারিখ না দেয়ার চিন্তা চলছে। এ জন্য ইসি জানুয়ারিতেই ভোট গ্রহণের তারিখ রাখার পরিকল্পনা রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ হতে পারে। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে কমিশন। নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচনের টাইমলাইনের মধ্যে ইসি ঢুকে গেছে।

ইসি ও সরকারের সুর একই: নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুর একই। উভয়েই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার কথা বলছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব দলের অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই বলেও মনে করে তারা। এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে সব দল কখনো অংশ নেয় না। অতীতেও নেয়নি। একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তিনি বলেছেন, অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে। বিরোধী দল বলতে তো শুধু বিএনপি নয়। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হবে না।

এদিকে সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে জানিয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, যেভাবেই হোক নির্বাচন হতে হবে। তা না হলে একটি সাংবিধানিক গ্যাপ (শূন্যতা) তৈরি হবে। গ্যাপ তৈরি হলে দেশে অরাজকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেটি নির্বাচন কমিশন হতে দিতে পারে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো একটি সংস্থা। পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দেশ আছে, সার্কভুক্ত দেশ আছে। এসব দেশ থেকে আসতে পারে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। যেনতেনভাবে নির্বাচন করার জন্য তো নির্বাচন কমিশনের দরকার নেই। প্রশাসন দিয়ে অথবা রামচন্দ্রকে দিয়েই তো তাহলে নির্বাচন করা যায়। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন নামক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে, যার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। যাতে তারা জনগণের স্বার্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে। তারা যে নিরপেক্ষ নয়, জনকল্যাণে কাজ করছে না, সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করছে না- এটা পরিষ্কার। তারা এটি করতে ব্যর্থ হলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া পৃথিবীতে আরও অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা আছে নির্বাচন কমিশনের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আছে তো, এর আগে কানাডিয়ান একটি মহিলাকে আনা হয়েছিল নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য।

আরো পড়ুন : অক্টোবরের শুরুতেই ঢাকায় বড় কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে ইসলামী আন্দোলন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *