রমজানের প্রধান পণ্যদ্রব্যের একটি হলো খেজুর। রমজান এলেই চাহিদা বাড়ে পণ্যটির। ফলে দেশের মোট খেজুরের চাহিদার অর্ধেকই বিক্রি হয় এ সময়টাতে। পাশাপাশি আরও একটি চিত্র প্রতিবছরের ঠিক এ সময়ে দেখা যায়। তা হলো-রমজান এলেই সব পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। শুধু খেজুর নয়, রমজান এলে আপেল, কমলা, আঙুর, বেদানাসহ জনপ্রিয় বিদেশি ফলের চাহিদাও বাড়ে। এবার রমজানের বাকি এখনো এক মাসেরও অধিক সময়। সময় যত এগিয়ে আসছে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের দামও। এরই মধ্যে দেশের বাজারে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ব্যাপক পরিমাণে।
এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, প্রতি পাঁচ কেজির খেজুরের কার্টনে দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকারও বেশি। এ সময় চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট, পাইকারি আড়তদার থেকে খুচরা ব্যবসায়ী এখনই খেজুর ও ফলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, গত বছর ১০ কেজির এক প্যাকেট জাহিদি খেজুর বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। আর মরিয়ম খেজুর পাঁচ কেজির প্যাকেট এবার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। গত বছর তা ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এভাবে মাবরুম, আজওয়াসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খেজুরের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আমরা জানি, দেশে সারা বছরে খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। তার মধ্যে রমজানে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৯১ হাজার ৯০৪ টন। চলতি অর্থবছরের এ সাত মাসে একই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮১১ টন। অর্থাৎ দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ খেজুর মজুত রয়েছে তা চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। তবু কেন এ মূল্যবৃদ্ধি? এখানেই রয়েছে এ পণ্যটির আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলছেন। সেইসঙ্গে বেশি দামে এ পণ্যটি ক্রয়ের অজুহাত দেখাচ্ছেন। অথচ তাদের দায়ী করা এ কারণগুলো মোটেই সঠিক নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের অজুহাত দেখিয়ে যে পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা, সেই পরিমাণ দাম আসলে বিশ্ববাজারে বাড়েনি। খেজুর ও ফলের দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি। বাজারে কারও কোনো তদারকি নেই। তদারকি থাকলে ইতিবাচক ফল পেতেন ভোক্তারা। বাজার তদারকির বাইরে থাকার কারণে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের মতো করে মুনাফা করে থাকেন।
আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে বাজার সিন্ডিকেট। বাজারে সিন্ডিকেটের এ চক্র যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এ ব্যাপারে কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি কারসাজির মাধ্যমে যারা খেজুরসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরো পড়ুন : মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়লেন ১৪০ পুলিশ সদস্য