রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে কিশোর গ্যাং গ্রুপের লিডারের পেট্রলের আগুনে দগ্ধ নারী

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ নারী নারী নির্যাতন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এতে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বিউটি বেগম (৫০) নামের একজন নারী। রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হারেজের ছেলে জুয়েল ও তার দলবলের এই সন্ত্রাসী হামলার পর গোটা এলাকায় এখন আতঙ্ক। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সাঈদ নামে একজনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক।

সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বিউটি বেগমের মৃত্যু হয়। আগুনে তার শরীর ৭৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছিল বলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। এর আগে জমি-সংক্রন্ত জের ধরে একই দিন বিকালে উপজেলার ভক্তবাড়ি এলাকায় বিউটি বেগমের বাড়িতে আগুন দেয় হারেজের ছেলে জুয়েল। এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান হারেজসহ ৩০ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের নামে রূপগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন ভক্তবাড়ির জাহের আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে হামলাকারীরা।
পৈশাচিক এ হামলার পর এলাকাবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। তারা বলছেন, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. যোবায়ের হোসেন জানান, ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বিউটি বেগম মারা যাওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হারেজের সঙ্গে একই এলাকার জমি ব্যবসায়ী জাহের আলীর ৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে সোমবার সকালে দুইপক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে এ সময় ছিল তার বড় ছেলে মো. মতিন। ঝগড়ার একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে জাহের আলীর হাতাহাতি হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিউটি বেগমের ছেলে বেলায়েত হোসেন। তিনি জাহের আলীর পক্ষ নেন বলে অভিযোগ ছিল হারেজ পক্ষের। এর জের ধরে বিকালে হারেজের আরেক ছেলে জুয়েল দলবল নিয়ে বিউটি বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের সবার হাতে ছিল বড় বড় রামদা ও দেশি নানা অস্ত্র। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করে। লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে ঘরের দরজায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দ্রুত ঘরের পাশে থাকা রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছিলেন বিউটি বেগম। আগুন ধরে তার শরীরে। এ সময় ওই এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিউটি বেগমের আর্তচিৎকারে তাকে রক্ষায় ছুটে আসেন মেয়ে স্কুলশিক্ষক শিমু। তিনিও দ্বগ্ধ হন। পরে আশপাশের লোকজন এসে বিউটি বেগম ও শিমু আক্তারকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিউটি বেগমকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারেজের ছেলে জুয়েল এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপ লালন করে। পান থেকে চুন খসলেই সন্ত্রাসী হামলা করে যে কারও ওপর। আর এসব কিছুর মদদ দেয় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ। হারেজ ও তার ছেলেদের অত্যাচারের ভয়ে এলাকাবাসী তটস্থ থাকে সব সময়।

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পৈশাচিক কায়দায় এ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তারা পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। তিনি বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হারেজ ও তার ছেলেরা যে কায়দায় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাদের অভিযোগ, বিউটি বেগমের ছেলে বেলায়েত তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে নাকি ছিল। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে চাই, বিউটি বেগমের ছেলে বেলায়েত কোনো কথাই সেদিন বলেনি। কী কারণে বেলায়েতের বাড়িতে হামলা করে তার মাকে হত্যা করল তার বিচার করতেই হবে। তারা যে দলেরই হোক, গ্রেফতার করতে হবে হামলাকারীদের।

মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বর্তমানে আতঙ্কে আছেন। আসামিরা তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তার বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেবে। এ বিষয়টি তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। মামলায় আসামিরা হলেন- হাবিবুর রহমান হারেছ, জাকিবুর রহমান জুয়েল, দুলাল মিয়া, রফিজ উদ্দিন, মো. বাবু, আমিনুল, মামুন মিয়া, মো. জয়নাল, ইয়াকুন, সাকিব, শান্ত, আলামিন, মো. রিফাত, মো. নাসিম, মো. রিফাত মিয়া, মো. মিয়া, মো. সজিব, মো. পাপ্পু, মো. আইয়ুন, আবদুল্লাহ, মো. জিয়াউল হক, মো. সাঈদ, মো. ছামাদ, দেলোয়ার হোসেন, দিপু, কবির হোসেন, মো. জুয়েল, মো. হিরন মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জন।

অঅরো পড়ুন : ২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার নামাজের সময়সূচি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *