শরীরে কাটা ও ফোলা জখম থাকলেও ‘মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই জেসমিনের মৃত্যু’

অনুসন্ধানী নারী প্রচ্ছদ মুক্তমত স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। গত রোববার বিকালে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। জেসমিনের মৃত্যুর ৯ দিন পর এ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলো।
ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তারা ফরেনসিক বিভাগের তিনজন বসেছিলেন। বোর্ড বসিয়ে তারা সেই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেছেন। তারপরই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। এরপর সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গত রোববার বিকালে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আটকের পর মানসিক চাপ থেকেই তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। আর এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে আমরা তার শরীরে দুটো জখম পেয়েছি। যা খুবই ছোট। এর একটা হচ্ছে কপালের বাম পাশে ছোট ‘কাটা’। যেটার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ ১ ইঞ্চিরও কম। এ ছাড়া ডান হাতের কনুইয়ের ভেতর দিকে একটি ফোলা জখম ছিল। যেটার সাইজ ২ সেন্টিমিটার। এটা সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীর হাতে ক্যানোলা করার সময় হয়। শরীরের শিরা-উপশিরা খুঁজে না পাওয়া গেলে একাধিকবার সিরিঞ্জিং করা হয়। তখন এ ধরনের সোয়েলিং (ফোলা) হয়। তাই জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত মতামতে আমরা বলেছি- যে দুটি ইনজুরি রয়েছে, তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। তার মৃত্যু হয়েছে ‘শক’ (মানসিক চাপ) থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই।

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরও জানান, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রথমে গিয়েছিলেন ফরেনসিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তারই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে তিনি বিভাগীয় প্রধানকেও মর্গে ডাকেন। তার ডাকে বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষক জামান নিশাত রায়হানকে সঙ্গে নিয়ে মর্গে যান। পরে জেসমিনের মরদেহ তারা একসঙ্গে দেখেন। এরপর তিনজনের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।
এর আগে র‍্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২শে মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। অফিসে যাওয়ার পথে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। ওইদিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪শে মার্চ সকালে তিনি মারা যান।

জেসমিনের মৃত্যুর পর দিন ২৫শে মার্চ রামেক এর মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র‍্যাব। ওইদিন বিকালে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে র‍্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।
সরকারের যুগ্মসচিব বর্তমানে স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র‍্যাব একটি অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করে র‌্যাব। আর র‍্যাব হেফাজতে এ নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপর ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আসে। তার মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

আরো পড়ুন : ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: সিপিডি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *