শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও সরবরাহ ঘাটতিতে ঘন ঘন লোড শেডিং

জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বেশ কিছুদিন ধরে ঘন ঘন লোড শেডিং হচ্ছে। প্রতিবছর গ্রীষ্মের তুলনায় শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় লোড শেডিং হয় না বললেই চলে। এবার সেখানে ব্যতিক্রম।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানিসংকটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে লোড শেডিং করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

বিশেষ করে বাইরের জেলাগুলোতে নিয়মিত ঘন ঘন লোড শেডিং হচ্ছে। শীতের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোড শেডিং হলেও জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও চার থেকে আট ঘণ্টা করে লোড শেডিং হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন : নানা অভিযোগে ঢাবির ১১৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করল বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড 

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মের তুলনায় শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট কম থাকে।

গ্রাহকরা বলছেন, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম থাকার পরও যদি এমন লোড শেডিং হয়, তাহলে গ্রীষ্মকালে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন হচ্ছে গ্রাহকরা। বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে সেচকাজ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

সারা দেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) শিডিউলে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার দুপুরে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৩৮১ মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয় আট হাজার ৮১৭ মেগাওয়াট। এ সময় লোড শেডিং ছিল ৫৬৪ মেগাওয়াট। গতকাল সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং ছিল ময়মনসিংহ জোনে। ১৭৫ মেগাওয়াট লোড শেডিং ছিল সেখানে। তবে দিনের চেয়ে রাতে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় তখন লোড শেডিংয়ের মাত্রাও বেশি থাকে।

আরো পড়ুন : দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ ক্ষতিকর সাকার মাছ নিষিদ্ধ

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়লা সংকটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ। ব্যয় কমাতে ব্যয়বহুল ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের কিছুটা ঘাটতিও তৈরি হয়েছে। তাই ঢাকার বাইরে কিছু সময়ের জন্য লোড শেডিং দিতে হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারিতে শুরু হচ্ছে সেচ মৌসুম। মে মাস পর্যন্ত চলবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য বলছেন, এবার গ্রীষ্মকালে লোড শেডিংয়ের আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শীত বিদায় নিতে পারে। তখন তাপমাত্রা বাড়বে। চাহিদা বাড়বে বিদ্যুতের। এবার সব মিলিয়ে সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ডলার সংকটে এলএনজি ও কয়লা আমদানি ব্যাহত হতে পারে।

আরো পড়ুন : নেত্রকোনার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ

গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসংক্রান্ত আন্ত মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচিত তথ্যানুযায়ী, গত সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি (২০২৩) সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা দাঁড়াবে চার লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৬টি, যার জন্য বিদ্যুৎ লাগবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকরা সেচের সময় পিক ও অফ পিক আওয়ার মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যাবে। বিপিডিবির চাহিদা মতো প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

আরো পড়ুন : সাত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রাজশাহীতে পৌর মেয়র শহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে

বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। শীতে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর চাহিদার এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেই হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড শেডিং করছে বিপিডিবি।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা রিনা মণ্ডল গতকাল বলেন, ‘শীতেও এখন নিয়মিত লোড শেডিং হচ্ছে।’

লোড শেডিংয়ের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিডেটের (ডিপিডিসি) দায়িত্বরত শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কম্পানি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দায়িত্বরত কর্মকর্তারা লোড শেডিং হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন।

আরো পড়ুন : নারীদের আইপিএলও রমরমা, অর্থমূল্য ৪৬৬৯ কোটি রুপি

এ ব্যাপারে গতকাল ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, ‘আমাদের এখন কোনো লোড শেডিং নেই। লোড শেডিং হয়ে থাকলে তা মেরামতের কারণে। কারণ গ্রীষ্মের জন্য আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় মেরামতকাজ করছেন।’

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান গতকাল বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই, তাই লোড শেডিং দিতে হয় না।’

আরো পড়ুন : যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে ৭৫ সালের পর সে কথা তারা বলতেও ভীতসন্ত্রস্ত ছিল

১০-১২ ঘণ্টা করে লোড শেডিং

ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলায় শীতের মধ্যেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে লোড শেডিং হচ্ছে। গতকাল নান্দাইলের চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল ৬টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর এসেছে ১০টায়। ১০ মিনিট থেকে ফের চলে যায়। আবার আসে দুপুর ১২টার কিছু পর। ১২ মিনিট থেকে চলে যাওয়ার পর আসেনি বিকেল ৫টা পর্যন্ত। [প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (সিলেট) ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি (ময়মনসিংহ)]

আরো পড়ুন : নানা অভিযোগে ঢাবির ১১৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করল বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড 

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *