শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে কাশ্মীরে গুলাম নবীর দল ডিএপি

আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ রাজনীতি

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুলাম নবী আজাদের নেতৃত্বাধীন দল ডিএপি সম্প্রতি দলের তিন শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের দুজনসহ আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা পীরজাদা মোহাম্মদ সাঈদ দল ছেড়ে আবারও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। শীর্ষ সহযোগীদের কেউ–ই এখন আর আজাদের পাশে নেই। সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে দলটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

কাউকে কাউকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। অবশ্য, গুলাম নবী আজাদ বলছেন, তিনি একে দলের জন্য ধাক্কা বলে বিবেচনা করছেন না।

রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ ৫২ বছর কংগ্রেসে কাটানোর পর কাশ্মীরি নেতা গুলাম নবী আজাদ গত বছরের ২৬ আগস্ট দল থেকে বের হয়ে আসেন। ঠিক এক মাস পর ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন দল গঠন করেন। নাম দেন ‘ডেমোক্রেটিক আজাদ পার্টি’। তাঁর অনুগামী হয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মীদের এক বিরাট অংশ।

দলটি এখনো নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেনি। ডিসেম্বরে এই নেতাদের মধ্য থেকে সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী তারা চাঁদ, মনোহর লাল ও বলবন সিংকে দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়। গতকাল শুক্রবার তারা চাঁদ, বলবন সিংসহ আরও ১৭ জন নেতা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ডিএপির শীর্ষ নেতা পীরজাদা সাঈদও আছেন। একে দলটির জন্য বড় ধাক্কা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে গুলাম নবী আজাদ শ্রীনগরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি কোনো ধাক্কা নয়। কারণ, তাঁদের তিনজনের কারওরই নির্বাচনী আসন নেই। আমি তাঁদের শুভকামনা জানাই। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। কারণ, তাঁরা আমার সাবেক সহকর্মী।’ পিটিআই বক্তব্যটি প্রকাশ করে লিখেছে, সাঈদ, তারা চাঁদ আর বলবন সিংকে ইঙ্গিত করে আজাদ কথাগুলো বলেছেন।

কেন আজাদকে ছেড়ে গেলেন শীর্ষ নেতারা

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দলের শীর্ষ নেতারা গুলাম নবী আজাদকে ছেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। ডিএপি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে সংবাদমাধ্যমটি সম্ভাব্য কারণ শনাক্ত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আজাদ কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গঠনের সময় অনেক নেতাই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। এসব নেতা ভেবেছিলেন, আজাদ বিজেপির বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। তবে একপর্যায়ে নেতারা উপলব্ধি করেন, আজাদ শুধু ধর্ম নিরপেক্ষ ভোটগুলোকেই বিভাজিত করতে পারবেন। আর তাতে শেষ পর্যন্ত বিজেপিরই শক্তি বাড়বে।

এ ছাড়া কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা কর্মসূচির প্রতি জনসমর্থনের কারণে দলটিতে যোগদানের জন্য এ নেতারা প্রভাবিত হয়েছেন। চলতি মাসের শেষের দিকে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারত জোড়ো যাত্রা প্রবেশ করবে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ধারণা করছেন, এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেখানে কংগ্রেসের অবস্থান আরও জোরালো হবে। ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ, বেকারত্ব এবং আমলাতন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার মতো ইস্যুগুলো তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবে দলটি।
দলত্যাগী নেতারা যা বলছেন

কংগ্রেসে ফিরে যাওয়া নেতারা অভিযোগ করেছেন, আজাদ তাঁর নিজের এলাকা চেনাব উপত্যকার নেতাদের অগ্রাধিকার দেন। ডিএপিতে সব গুরুত্বপূর্ণ পদ তাঁদের দেন। কংগ্রেসে যোগদানকারী নেতারা আরও বলেছেন, গুলাম নবী আজাদ চেনাবের জিএম সারুরির মতো নেতাদের প্রভাব কমাতে পারছেন না।

বহিষ্কৃত এক নেতা বলেছেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি আজাদ সাহেবকে কথাটি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেননি।’

সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিএপির অভ্যন্তরীণ এ অসন্তোষের ফায়দা নিচ্ছে কংগ্রেস। তারা অসন্তুষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাঁদের ‘ঘরে’ (কংগ্রেস) ফিরে আসার জন্য বোঝাচ্ছে। এসব নেতাকে এ বলে আশ্বস্ত করা হয় যে তাঁরা দলের ভেতরে যথেষ্ট সম্মান পাবেন। সময়মতো তাঁদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়।

ডিএপি সূত্র বলছে, সাবেক মন্ত্রী তাজ মহিউদ্দিন, সাবেক আইনপ্রণেতা হাজী রশিদ দার এবং গুলজার ওয়ানি এখনো আজাদের সঙ্গে আছেন। সাঈদকে হারানোর কারণে ডিএপির ওপর বেশ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, কাশ্মীর উপত্যকায় সাঈদের অনুসারীর সংখ্যা ভালো রকমের। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাঈদ।

ডিএপির নেতারা কী ভাবছেন

জ্যেষ্ঠ এক ডিএপি নেতা বলেছেন, পীরজাদা সাঈদ যে আগের দলে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তা তাঁদের জানা ছিল। তাঁর অভিযোগ, সাবেক এ মন্ত্রী ডিএপিকে তছনছ করে দিতে তারা চাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। নিজেদের মর্জিমাফিক দলকে পরিচালনা করতেন তাঁরা। অথচ কেন তাঁকে বহিষ্কার করা হলো না, তা জানতে চাইলে ডিএপি নেতা বলতেন চাঁদ ও অন্যদের বহিষ্কারাদেশে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন তার মধ্যে পীরজাদাও ছিলেন।

শুক্রবার ডিএপি থেকে কংগ্রেসে যোগদানকারী অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা হলেন সাবেক বিধায়ক মুজাফফর পারে, জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এমকে ভারদ্বাজ, সাবেক মন্ত্রী ভূষণ দোগরা, ডিএপির সাবেক মহাসচিব নারিন্দার শর্মা, আজাদের নেতৃত্বাধীন দলের সাম্বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল চেয়ারপারসন বিজয় তারগোত্রা, সাবেক কাঠুয়া ও কাটরা পৌর কাউন্সিলের চেয়ারপারসন নরেশ শর্মা এবং আমব্রিশ মাগোত্রা।

ডিএপিতে যোগদানের আগে দোগরা ছিলেন পিডিপিতে আর নরেশ শর্মা ছিলেন বিজেপিতে। অন্য সবাই ডিপিএতে যোগদানের আগে কংগ্রেসে ছিলেন এবং তাঁরা আবার কংগ্রেসে ফিরে গেছেন।

মনোহর লাল শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটিই বিধানসভায় তাঁর নির্বাচনী আসনের মানুষের চাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সাবেক বিধায়ক মনোহর লাল কাঠুয়ার বিলাওয়ার আসন থেকে দুবার জিতেছিলেন। গত মাসে ডিএপিতে সংকট শুরুর পর দলটির কয়েক জন জ্যেষ্ঠ নেতা মনোহরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। সূত্র বলছে, ওই ডিএপি নেতারা স্বীকার করেছেন, মনোহর লালকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।

আরো পড়ুন : আজ ৭ জানুয়ারি; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *