সংস্কারে পাশে থাকার প্রত্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ কোটি ডলারের সহায়তা চুক্তি সই

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক ওকে নিউজ স্পেশাল তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লব-উত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অপরিহার্য সংস্কার কার্যক্রমে দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা সফরকারী ওয়াশিংটনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই বার্তা স্পষ্ট করেন। রোববার তারা প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেন। সব বৈঠকেই ঘুরেফিরে বাংলাদেশের অর্থনীতির নিম্নমুখিতা (ডাউন ওয়ার্ড স্পাইরাল) নিয়ে আলোচনা হয়। এটি এখনই ঠেকাতে সরকারের জরুরি উদ্যোগগুলোর বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদল আগ্রহ নিয়ে শুনে। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেখানে যে ফর্মে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ পাবে সেভাবেই বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সমৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটন পাশে থাকবে। সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফররত ইউএস ট্রেজারির সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ও পররাষ্ট্র দপ্তরের এসিসটেন্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লুসহ ছয় সদস্যর মার্কিন টিম সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। সেখানে তারা ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তার কথা জানায়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বৈঠক শেষে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এক ফেসবুক পোস্টে আলোচনা সামারি তুলে ধরা হয়। ফেসবুক পোস্টটি ছিল এমন ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।

ওদিকে, তার আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। পরে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। বৈঠক শেষে ইউএসএইডের উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর জানান, সুশাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি খাতে ওই অর্থ অনুদান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এর আগে দিনের শুরুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সফররত ছয় সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল। এ নিয়ে পৃথক ফেসবুক বার্তায় দূতাবাসের তরফে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে ভালো লেগেছে। আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে দূতাবাসের বার্তাটি ছিল এমন ‘বাংলাদেশের নবউদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করবো। এ লক্ষ্যে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে তাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত বিষয়ে যে আলোচনা হলো: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরের বিষয়ে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিক ব্রিফ করেন নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। তিনি জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি বিশেষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কার নিয়ে সরকারের ধারণা ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এতে যুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে ঢাকা সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী। পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সফররত যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে ভোজ-বৈঠকে মিলিত হয়েছিলো। লাঞ্চ শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বলে তাদের জানানো হয়েছে। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন কোন খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে জসীম উদ্দীন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এক মাসের কিছুটা বেশি। আজ বৈঠকে পরিবর্তিত যে পরিস্থিতি ও সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে ধ্যান-ধারণা এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই সফর একটি ভিত্তি। সামনে আমরা এই আলোচনাকে বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবো। পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করবো, কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতিনিধিদলের এই সফরে প্রথম যে আশ্বাস, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়। সেটারই প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসেই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সবক’টি খাতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। শ্রম আইন নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে এবং এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ঢাকায় আসার আগে দিল্লি সফর করেছেন। এই সফরে ভারত থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন কিনা? জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশন আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশন আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফরম।

সংস্কার ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : দেশ পুনর্গঠন, মৌলিক সংস্কার এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সফররত দেশটির উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ সহায়তা চান। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধি দলকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জসমূহের কথা উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিকখাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশার সঞ্চার করেছে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসে তাৎপর্যপূণ এক মুহূর্ত। প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের নেয়া সংস্কার রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, ভোট কারচুপি প্রতিরোধে আমাদের সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে। স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম। তাই আমাদের সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নিম্যানের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দল প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে তার নেতৃত্বে বাংলাাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে বলে জানায়। বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানায়, সংস্কার কর্মসূচিতে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক বিষয়ে সহায়তা দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিকখাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউ ইয়র্কে সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি ব্র্যান্ডন লিঞ্চ, ডেপুটি সহাকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেরোড মেসন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র আন্দোলনের সময় দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতির ছবি-সম্বলিত আর্টবুক উপহার: সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলকে গণঅভ্যুত্থানের সময় দেয়ালে ছাত্রদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্রময় গ্রাফিতির ছবি-সম্বলিত একটি আর্টবুক উপহার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বইটিতে জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব চলাকালে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও নগরের দেয়ালে তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা সেরা কিছু শিল্পকর্মের ছবি স্থান পেয়েছে। ড. ইউনূস মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে গ্রাফিতির ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেন। বলেন, এসব গ্রাফিতিতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পাশবিক শক্তিকে প্রতিহত করতে নৃশংস এক বাহিনীর মুখোমুখি আন্দোলন-বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও যুবকদের দাবি-দাওয়া, আবেগ-অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা চিত্রিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের ঢাকার দেয়ালগুলো একবার ঘুরে দেখার অনুরোধ করবো। এসব গ্রাফিতি এখনো রাজধানীর দেয়ালে-দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। এগুলো শুধু বিপ্লবের পরই নয়, আন্দোলন চলাকালেও শিক্ষার্থীরা সরকারি বাহিনীকে অমান্য করে এসব গ্রাফিতি আঁকেন। তরুণ চিত্রশিল্পীদের আঁকা-লেখায় ঢাকা সারা দুনিয়ার গ্রাফিতি রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পায়। দেয়ালগুলো পরিণত হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিশাল ক্যানভাসে। সরকারকে নানা শক্তিশালী বার্তা দিতে তারা বিভিন্ন সৃজনশীল ও হৃদয়গ্রাহী স্লোগান ও কবিতা লিখেছে। এসব বার্তা যেন বিপ্লবের চেতনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার শিল্পিত প্রতিফলন। ছাত্ররা দেশবাসীর সমর্থন আদায়ে শিল্পকর্মের মাধ্যমে কীভাবে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টা তা স্মরণ করে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলেন, তরুণদের কাছে রং-তুলি কেনার মতো অর্থই ছিল না। সাধারণ মানুষ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। ছাত্রদের মনের মাধুরী মিশিয়ে দেয়ালে-দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা স্বপ্ন-বাসনার এসব নান্দনিক ও নজর-কাড়া চারুকলা গোটা ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে দেয়। এর মধ্যে অনেক গ্রাফিতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। প্রশংসা কুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের।

অঅরো পড়ুন : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দ্বিতীয়বারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর  বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *