সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ডুবতেছে নিন্মাঞ্চল

ওকে নিউজ স্পেশাল জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

সিলেট অফিস: টানা বৃষ্টি ও বাংলাদেশের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটের সবক’টি নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপরে না হলেও ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। এতে সিলেট নগরী ও জেলার নিন্মাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। যেকোন সময় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছেন নিন্মাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেটে এ মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটিকে চলতি মৌসুমের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আগামী ৪৮ ঘণ্টা এবং পরবর্তী ৪-৫ দিন সিলেটে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, সিলেটের প্রধান দুই নদী সরমা ও কুশিয়ারা সোমবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয় ১১.৮৭ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৭৫ সে.মি.। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২১ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সি.মি। কুশিয়ারা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কুশিয়ারার পানি বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। বিকেল ৬ টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৬৫ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১৩.০৫ সে.মি.। কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে আবার বেড়েছে। এ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ৯.১৬ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ৯.৪৫ সে.মি.। জৈন্তাপুর সারী নদীতে পানি বেড়েছে। এ নদীর সারীঘাট পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১১.২৬ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৩৫ সে.মি.। কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে পানি বেড়েছে। এ নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৩৯ সে.মি.।

গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত নগরীর মেজরটিলা ইসলামপুর বাজার, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, আখালিয়া নেহারীপাড়া, যতরপুর, উপশহর, ছড়ারপার, ঘাসিটুলা, কানিশাইল, কুশিঘাট, মোহাম্মদপুর, সৈয়দপুর, জাহানপুর, টেক্সটাইল রোড, মইয়ারচর, কুচাই, বদিকোণা সহ বেশ কয়েকটি এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যায়।

নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল আহমদ বলেন, টেক্সটাইল রোডের বিভিন্ন জায়গায় কোমর সমান পানি রয়েছে। পানিতে ডুবে থাকার কারণে সকাল থেকে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছেনা। এছাড়া জাহানপুর, সৈয়দুপুর ও মোহাম্মদপুরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে।

আলুর তলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাদিক মিয়া জানান, বৃষ্টি আর বন্যার পানির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। যার কারণে ব্যবসার অবস্থা একবারে খারাপ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটে মাত্র একদিনে ৩০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হয়েছে। এই পরিমান বৃষ্টির পানি নামতে একটু সময় লাগে। তাই সামান্য সময়ের জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি অনেকটা নেমে গেছে।

এছাড়া নগরীর বাইরে সীমান্ত ও হাওর বেষ্টিত এলাকা কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিন্মাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলার ১ নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন, ২ নং লক্ষী প্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন, ৪ নং সাতবাঁক ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিন্মাঞ্চল সহ বেশ কয়েকটি এলাকা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কানাইঘাট উপজেলার মুলাগুলের বাসিন্দা এম. সোয়েব আহমদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকার নিচু গ্রামগুলোতে পানি ঢুকতেছে। এভাবে বৃষ্টি হলে প্রায় গ্রামের ভিতরে বন্যার পানি ঢুকে যাবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা আছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কাওছার আহমদ

আরো পড়ুন : সিলেটে নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধান পাওয়া যায়নি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *