সিলেট বিভাগে ছড়া-খালের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদ-নদী

অনুসন্ধানী জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ ভ্রমণ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

কাওছার আহমদ, সিলেট : সিলেট বিভাগের চার জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৩৪টি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। যদিও শুষ্ক মৌসুমে ১০০টি নদী চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। তবুও ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে, উপজেলা থেকে উপজেলায় এই নদীর নাম পাওয়া যায়। চিহ্ন দেখা যায়। ভূমি জরিপের কেতাবে যা নদী হিসাবে লিপিবদ্ধ আছে, বর্ষায় ভূমিতে সেই নদীর অস্তিত্ব অনেকটা বিদ্যমান হয়। এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। এই নদীগুলো এখন দূষণের কবলে পড়ে হুমকির মুখে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়,সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরের ভিতর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে অসংখ্য ছড়া বা খাল। এসব ছড়া বা খালের মধ্যে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে টন টন ময়লা-আবর্জনা। ফেলে দেওয়া এসব আবর্জনা ছড়া থেকে নদীতে গিয়ে পড়ে। যার ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে নদী। সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে ছোট-বড় ২৬টি ছড়া বা খাল প্রবাহমান । প্রতিদিন এসব ছড়া-খালে নুন্যতম ৫০ টন বর্জ্য ফেলা হয়। যা সুরমা নদীকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। তথ্যটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। এছাড়াও নদী তীরবর্তী গ্রামীণ বাজার গুলোর বর্জ্যও নদীকে প্রতিদিন দূষিত করছে।
বাপা সূত্র জানায়,সিলেট অঞ্চলের নদী, ছড়া ও খাল রক্ষায় বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২২ উপলক্ষে এটিসহ পরিবেশবাদী ৬টি সংগঠনের উদ্যোগে সিলেট বিভাগের নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আগামী ২২ মার্চ হবিগঞ্জে ‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ‘গণশুনানি’ সফলের লক্ষ্যে এ ৬টি সংগঠনের উদ্যোগে গত শনিবার বিকেলে সিলেট নগরীতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সিলেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, সিলেট মহানগরীর ভেতর দিয়ে প্রবহমান ২৬টি ছড়া বা খালে প্রতিদিন নুন্যতম ৫০ টন নাগরিক বর্জ্য ফেলা হয়। যা সুরমা নদীকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। তাছাড়া সুরমা-কুশিয়ারা বিধৌত শত নদীর সিলেট বিভাগে নদী ধ্বংসের অপকর্ম কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। যার প্রভাবে আমাদের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। দখল, দুষণ ও ভরাটের কারণে সিলেটের অনেক নদী আজ মুমূর্ষু। এই নদীগুলো রক্ষা করা না গেলে সিলেটের অস্তিত্ব সংকট হবে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সিলেটের আধিকাংশ নদী প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদীর ১৭টি নদী সিলেট বিভাগের। বাংলাদেশমুখি এই নদীগুলোর অধিকাংশে ভারত সরকার বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করেছে। আমাদের নদীগুলোতে প্রয়োজনের সময় পানির অপর্যাপ্ততায় হাহাকার লাগে। আবার অপ্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত পানি প্রবাহে দুর্ভোগ বাড়ে। লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সিলেট বিভাগের চার জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৩৪টি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। যদিও শুষ্ক মৌসুমে ১০০টি নদী চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। তবুও ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে, উপজেলা থেকে উপজেলায় এই নদীর নাম পাওয়া যায়। চিহ্ন দেখা যায়। ভূমি জরিপের কেতাবে যা নদী হিসাবে লিপিবদ্ধ আছে, বর্ষায় ভূমিতে সেই নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যা আছে তা রক্ষা করতে হবে। সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু, যাদুকাটা, ধলা, ধলাই, জুড়ি, বাসিয়া,লোভা,সারি,সুরই,ডনা, বোকা, মাগুরা, সোনাই, সুতাং, নলজুড়সহ সিলেটের বিভিন্ন নদী এখন দুষণের কারণে বিপর্যস্থ। তীরের প্রায় প্রতিটি গঞ্জ-বাজারের আবর্জনার শেষ গন্তব্য হয় নদী। এই আবর্জনায় প্লাষ্টিক বর্জ্যই পরিমাণে বেশি। তাছাড়া হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাটের অপরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল এই মূহুর্তে সিলেট বিভাগের নদ-নদীর জন্য একটি বড় হুমকি। গত দেড় দশকে এই অঞ্চলে স্থাপন করা বিভিন্ন শিল্পকারখানা বর্জ্যশোধনাগার ব্যবহার না করে কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২২ মার্চ হবিগঞ্জে সকাল ১১টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠিত হবে। ‘গণশুনানি’র আয়োজনকারী সংগঠনগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপার’স বাংলাদেশ, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার, সারি নদী বাঁচাও আন্দোলন ও বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ। গণশুনানিতে ৬ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ছাড়াও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং নদ-নদী দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। ‘গণশুনানি’ থেকে উঠে আসা মতামত ও সুপারিশসমূহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দপ্তর ও গণমাধ্যমে পাঠানো হবে। যাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে দূষণের কবল থেকে নদীকে রক্ষা করা যায়।

কাওছার আহমদ, সিলেট

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *