নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল। গত মঙ্গলবার নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘জেল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠানোর পর গুরুদাসপুর থানার ওসির বদলি হয়ে গেছে।’ মতবিনিময় সভাটি অনেকেই ফেসবুকে লাইভ করে। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
সম্প্রতি নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের অফিস আদেশে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিনকে ওয়ার হেডকোয়ার্টার্স নাটোর-এ বদলি করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ১৬ দিন কারাভোগের পর মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পেয়ে নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওই মতবিনিময় সভায় ওসির উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। আজকে আওয়ামী লীগের স্ট্যান্ডিং সেক্রেটারি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজতে যাবে কেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্রাষ্ট্রমন্ত্রী সকলের কাছে জেলে থেকে আবেদন পাঠিয়েছিলাম। আবেদন পাঠানোর পর মহান রাব্বুল আলামিনের দোয়ায় আমি জেলে থাকা অবস্থায় সে শাস্তি পেয়েছে। এই ওসি সাহেব ছিল জামায়াত-বিএনপির মূখপাত্র। বিএনপি নেতা আজিজ চেয়ারম্যানসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারতো না। ওসি মতিন সাহেব জামায়াত-বিএনপির মুখপাত্র হিসাবে এই উপজেলার দায়িত্ব নিয়েছিল।
মাঝখানে কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বুঝতে না পেরে ভূল বুঝে এই ওসি সাহেবের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। আমি যখনি বুঝতে পেরেছি এই ওসি সাহেব আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার এজেন্ডা নিয়ে এই উপজেলায় এসেছে, তখনি আমি সরে এসেছি এবং বুঝেছি এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না। তখন থেকে এই ওসি সাহেব আমাকে ব্যক্তিগতভাবে শত্রুতার তালিকায় নিয়ে আমার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষকে আমার নামে মিথ্যা মামলা করার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে।’ ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে তিনি সংগঠন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নজরুল ইসলাম নাজিরপুর ইউনিয়নের গুপিনাথপুর গ্রামের মৃত-আমির আলী ম-লের ছেলে। তিনি নবগঠিত গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের ৫টি মামলা ও একটি নিয়োগ জালিয়াতি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ২রা এপ্রিল আশ্রায়ণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। একইদিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ১৮ই এপ্রিল অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এসে সভাপতি লুৎফর রহমান হিরা এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান উজ্জ্বলের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এ ব্যাপারে নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান হিরা জানান, নজরুল ইসলামের দেয়া বক্তব্য নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। বিষয়টি উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবগত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাকে মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার বিদায়ী ওসি আবদুল মতিন বলেন, তার বদলির বিষয়টি রুটিন অনুযায়ী হয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় তাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থ আত্মাসাৎ মামলায় সে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তার ভাইরাল হওয়া বক্তব্য সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। যদি তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
আরো পড়ুন : মার্কিন সাংবাদিকের মুক্তির আবেদন খারিজ করল রাশিয়ার আদালত