বরিশাল ব্যুরো: বরিশালের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বছরে হাতেগোনা কয়েকবার নগরীতে আসতেন। নীরবে এসে কালু শাহ সড়কের ভাড়া বাড়িতে কয়েক দিন অবস্থান করে চলে যেতেন। কাছের লোকজনও টের পেতেন না তাঁর আসা-যাওয়ার খবর। তবে বৃহস্পতিবার তিনি নগরীতে ঢুকলেন হাজার হাজার শুভাকাঙ্ক্ষীর মুহুর্মুহু স্লোগান ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে। সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ও গাড়ির শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাঁকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্থানীয় যেসব আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর নাম শুনলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেন; তাঁরাও এসেছিলেন অনুষ্ঠানে।
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা। সাদিকের বাবা দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই। ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে খোকন সেরনিয়াবাত জয়ী হয়ে বরিশালের বহু বছরের রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ পাল্টে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সড়কপথে বরিশালে আসেন খোকন সেরনিয়াবাত। সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বরিশাল সদরের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।
হাজারো নেতাকর্মী নগরের প্রবেশমুখ গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে খোকন সেরনিয়াবাতকে নগরের সদর রোড বিবির পুকুর পাড়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে নিয়ে আসেন। এখানে আগে কখনও আসেননি খোকন সেরনিয়াবাত। ১০ কিলোমিটার সড়কপথে ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে খোকন সেরনিয়াবাত হাত তুলে সংবর্ধনার জবাব দেন।
দলীয় কার্যালয় চত্বরে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে আমার অঙ্গীকার একটাই– ‘বরিশাল হবে নতুন নগরী; আমি কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি, ভবিষ্যতেও দেব না। আমার বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের সেবা করেছেন। আমিও নগরবাসীর সেবা করতে চাই। উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়া বরিশাল নগরীকে আধুনিক নগরে পরিণত করতে চাই।’
মেয়র সাদিকের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসসহ সাদিক অনুসারী গুটিকয়েক নেতা এ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও বেশিরভাগ নেতাকর্মী ছিলেন অনুপস্থিত। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী নেতাকর্মী শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনার নেতৃত্ব দেন। তাঁরা বরিশাল আওয়ামী লীগে সাদিকবিরোধী হিসেবে পরিচিত। ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক গত মঙ্গলবার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন জানান।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা বরিশালে জনগণের কাছে নৌকার জন্য ভোট ভিক্ষা চাইছি। আমরা শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এসেছি– খোকন সেরনিয়াবাতকে নির্বাচিত করা হলে বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচিত হলে প্রত্যাশার চেয়ে বেশী উন্নয়ন হবে। তিনি একজন বিনয়ী ও সজ্জন মানুষ। দলের কর্মীদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিভেদ ভুলে সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। নগরবাসী বিরক্ত হয়– এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
আব্দুর রহমান বলেন, আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সিটি নির্বাচন আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। হাতে হাত রেখে কাজ করলে নৌকা বিজয়ী হবে– প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিলাম। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, খোকন সেরনিয়াবাতকে জয়ী করার মধ্য দিয়ে বরিশালবাসীকে দীর্ঘ দিনের অনাচার ও অত্যাচারমুক্ত করা হবে। আগামী দিনে নগর ভবন হবে জনগণের নগর ভবন।
আরো পড়ুন : গাইবান্ধায় পুলিশ নারী কল্যান সমিতি ঈদ সামগ্রী বিতরণ