বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক কিছু জটিলতার কারণে শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসময় চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন রাতে সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটো ব্লক এখনো রয়ে গেছে। হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও খালেদা জিয়ার নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তাঁর। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন তিনি।
দীর্ঘদিন পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার খবরে দুপুর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাঁর গুলশানের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন। বাসার সামনে এবং আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যও। দলীয় প্রধানকে একনজর দেখার জন্য সেখানে ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানে ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওয়ানা দেন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। গাড়ির সামনে-পেছনে ছিলেন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। পুরো সময় তাঁকে কর্ডন করে রাখে তাঁরা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় হাসপাতালে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এসময় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে হাসপাতালের সামনের সড়কেও মিছিল করেন তাঁরা। সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা, কামরুজ্জামান রতন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মহানগর বিএনপি দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য ছাইরুল কবির খান প্রমুখ।
খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা তাঁর দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আরো পড়ুন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন