চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সদ্য প্রয়াত মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার রাতে লাখো জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার নিজ কর্মস্থল মাদ্রাসার কবরস্থান মাকবাতুল জামিয়ায় চিরঘুমে শায়িত করা হয় তাকে।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ২০মিনিটে হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
জানাজায় আলেম, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। এ সময় বর্ষীয়ান আলেম আল্লামা ইয়াহইয়ার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
জানাজার আগে উপস্থিত লোকজনসহ দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চান আল্লামা ইয়াহইয়ার বড় ছেলে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা শোয়েব। জানাজা নামাজ শেষে তার ওসিয়ত অনুসারে তার প্রিয় কর্মস্থল বাইতুল আতিক জামে মসজিদ সংলগ্ন ‘মাকবাতুল জামিয়া’ কবরস্থানে আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কবরের দক্ষিণাংশে চিরঘুমে শায়িত করা হয়।
এর আগে প্রবীণ এ আলেমের মৃত্যুর খবরে শনিবার ভোররাত থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে সর্বস্থরের জনতা ভিড় করে। এছাড়া রাত থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন হাটহাজারীতে আসতে শুরু করে হুজুরকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে। ভোর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস-মাইক্রোবাস-কারসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়েও হাটহাজারীতে লোকজন আসতে থাকেন। ফলে মাদ্রাসার আশপাশের এলাকা এখন লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীদের এ তীব্র তাপদাহে বিচলিত ও উদিগ্ন হাজার হাজার জনতাকে শরবত বিলি করতে দেখা গেছে।
সুদূর ঢাকা থেকে এসেছেন মাওলানা মো. জুবায়ের। নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন, হুজুরকে শেষবারের মতো একবার দেখতে ঢাকার গাজীপুর থেকে এসেছি। দেরিতে আসলে দেখতে পাবো না। তাই সকাল সাড়ে ১০টার আগেই মাদ্রাসায় চলে এসেছি। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। আমাদের কওমি অঙ্গনের অভিভাবক ছিলেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা হাফেজ মাওলানা ওবাইদুর রহমান নামে একজনের সাথে কথা হয়। এক সময় পটিয়ার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা এই আলেম বলেন, আজীবন সত্য ও হকের পক্ষে ছিলেন আল্লামা ইয়াহইয়া। তিনি জীবনের সবটুকু সময় তিনি কওমী ও দ্বীনের খেদমত করেছেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান, হাটহাজারীর এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালাম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস. এম. রাশেদুল আলম, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোয়েব আহমেদ খান, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান, হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রুহুল আমীন সবুজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আজম উদ্দিন এবং হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস, হাটহাজারী প্রেস ক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলীসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রুহুল আমীন সবুজ বলেন, মরহুম আল্লামা ইয়াহইয়ার নামাজে জানাজা ও দাফনের কাজ অত্যন্ত নিবিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চভাবেই সর্তক ছিলাম। তাই কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তার জানাজাসহ যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়।
অন্যদিকে, আল্লামা ইয়াহইয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহীম বীরপ্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস. এম ফজলুল হক, হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান, বেফাকের সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’র মহাপরিচালক ও আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস এর মহাসচিব মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, তানযিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়ার চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রাহমানী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, হাটহাজারী প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাবু কেশব কুমার বড়ুয়া, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
আরো পড়ুন : শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রাবিতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে