দীর্ঘ ২২ বছর পর সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন মিজানুর রহমান। প্রায় ৭০ বছর বয়সী মা ফিরোজা বেগম কক্সবাজারের চকরিয়ার বাড়িতে বসে ছেলেকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিলেন। ৪২ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে মায়ের দেখাও হয়েছে। তবে ছেলেকে দেখার পর মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই মায়ের মুখে হাসি নেই। কেননা, ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরেছেন। পায়ে বেশ বড় একটি ক্ষত। নিজের পাসপোর্ট ছাড়া ছেলে ফিরেছেন একদম শূন্য হাতে।
মিজানুর রহমানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের সঙ্গে মুঠোফোনে আজ মঙ্গলবার কথা হয়। রেজাউল জানালেন, তাঁরা ছয় ভাই, এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। মিজানুর ছাড়া অন্যরা বিয়ে করে যাঁর যাঁর সংসার নিয়ে থাকছেন। বাবা আবদুল জব্বার মারা গেছেন। মা ফিরোজা বেগম থাকেন তাঁর সঙ্গে।
রেজাউল করিম আজ সকালে চিকিৎসার জন্য মিজানুরকে নিয়ে যান চট্টগ্রামে। বিকেলে জানান, মিজানুরকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ভাইয়ের সঙ্গে হাসপাতালেই আছেন।
মিজানুর রহমান বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তিনি এলোমেলোভাবে ঘুরছিলেন। স্বজনদের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। কোথায় যাবেন, বলতে পারছিলেন না। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মিজানুরকে রাজধানীর আশকোনায় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন সেন্টারে পাঠায়। তারপর ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পর মিজানুরের পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। ভাই রেজাউল করিম ও তাঁর আত্মীয় আমির হামজা রোববার রাতে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন সেন্টার থেকে মিজানুরকে নিয়ে চকরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
আজ সকালে যখন কথা হয়, তখন রেজাউল করিম বলেন, তাঁর ভাই দেশে ফিরবেন, সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁদের মা। পরে যখন জানলেন ছেলে ফিরেছে, তখন তাঁকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিলেন। কিন্তু ছেলেকে দেখার পর মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
রেজাউল জানালেন, মিজানুর রহমান ২০০১ সালে সৌদি আরবে গাড়িচালক হিসেবে কাজের জন্য গিয়েছিলেন। তখন যেতে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। বিদেশে যাওয়ার পর দুই বছরের মতো মিজানুর রহমান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তার পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
রেজাউল করিম বললেন, ‘ভাই পাসপোর্ট ছাড়া কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি। পায়ের যে ক্ষত, তা থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না, তা নিয়েও সবাই চিন্তিত। ভাই মায়ের কাছে ফিরেছেন—একবার মনে হয় বুঝতে পারছেন, আবার মনে হয় বুঝতে পারছেন না। চিকিৎসা করে সুস্থ হলে হয়তো বুঝতে পারবেন মায়ের কাছে ফিরেছেন।’
মিজানুর রহমানের কাছে থাকা পাসপোর্টে জরুরি যে নম্বর রয়েছে, সেই নম্বরে ফোন করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সদস্যরা জানতে পারেন, ওটা পরিবারের কারও নম্বর নয়। তা ছিল যে দালাল পাসপোর্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর নম্বর। চট্টগ্রামের পুলিশকে ছবি ও পাসপোর্টের বিস্তারিত জানানো হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিজানুরের ছবি ও পাসপোর্টের ছবি দিয়ে তাঁর পরিবারের খোঁজ করা হয়। সেই ছবি ও পোস্ট দেখে দুবাই থেকে মিজানুর রহমানের এক ভাই ওসমান গনি গ্রামের বাড়িতে ফোন দিলে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মেলে।
মিজানুর রহমানের পাসপোর্ট অনুযায়ী তাঁর বয়স ৫৭ বছর। বাবার নাম আবদুল জব্বার, মা ফাতেমা বেগম। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও পাসপোর্টের মেয়াদ নবায়ন করা হয়েছে। তবে মিজানুর রহমানের ছোট ভাই রেজাউল জানালেন, তাঁর মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। আর ভাইয়ের বয়স খুব বেশি হলে ৪২ বছর হবে।
ভাইয়ের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে রেজাউল করিম জানালেন, যখন দুবাই থাকা ভাইয়ের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন মিজানুর রহমান দেশে ফিরেছেন, তখন বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে তিনি এবং তাঁর আত্মীয় আমির হামজা ঢাকায় রওনা দেন। আর ভাইকে পাওয়ার পর থেকে তাঁর চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে। তাঁদের ভাই আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক—সেটাই এখন তাঁদের একমাত্র চাওয়া।
আরো পড়ুন : কাল তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের নিষেধাজ্ঞা রুলের চূড়ান্ত শুনানি