মাকে বিদায় দিয়ে বাবার দাফনের জন্য টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় ফিরছেন মেয়েরা 

জাতীয় নারী পুরুষ প্রচ্ছদ বিনোদন সিনেমা হ্যালোআড্ডা

বিনোদন প্রতিবেদক : এক দিন আগে মারা গেছেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমান। নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইলে স্ত্রীকে দাফন করে বুধবার সকালেই ফিরে আসেন। মেয়েরা টাঙ্গাইলেই রয়ে গেছেন। কিন্তু বুধবার হঠাৎ বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আবার ঢাকার দিকে রওনা করেছেন তাঁরা।

১৯৫৯ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন সোহানুর রহমান। বগুড়া, জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি।

বুধবার বিকেলে উত্তরার বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন সোহানুর রহমান। অনেক ডাকাডাকি করেও তাঁর সাড়া পাননি গৃহকর্মী। পরে অচেতন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে সোহানুর রহমানের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তবে সোহানুর রহমানের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসকেরা। তিনি তিন মেয়ে রেখে গেছেন। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে শোকে কাতর ছিলেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাতা সোহানুর রহমান। স্ত্রীর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করার ইচ্ছা পোষণ করে গেছেন সোহানুর রহমান।

সোহানুর রহমানের মৃত্যুর খবরে ঢাকাই সিনেমার পরিচালক, শিল্পীরা হাসপাতালে ভিড় করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি ছাড়াও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, মহাসচিব শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলমসহ আরও অনেকে শোক জানিয়েছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

রীতি অনুযায়ী চলচ্চিত্রের সূতিকাগার এফডিসিতে সোহানুর রহমানের মরদেহ সহকর্মীদের শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে কি না, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছি তাঁর মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর পরিবার চাচ্ছে এখনই টাঙ্গাইল নিয়ে যেতে। এরপরও আমরা তাঁদের সঙ্গে বসব। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তাঁর মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে যাওয়ার।’

১৯৭৭ সালে সোহানুর রহমান তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আরেক বিখ্যাত পরিচালক শিবলী সাদিকের সহকারী হিসেবে। ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ দিয়ে নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন সোহানুর রহমান। এ ছাড়া এ জে মিন্টু, শহীদুল হক খানেরও সহকারী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ তাঁকে পরিচালক হিসেবে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এ ছবিতে অভিষেক হয় সুপারস্টার সালমান শাহ ও মৌসুমীর। তাঁর হাত ধরে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে হালের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান, ডন, শাকিল খানসহ অনেক অভিনেতা ও কলাকুশলীর।

দুই ডজনেরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছিলেন সোহানুর রহমান। এগুলো হলো ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’, ‘বেনাম বাদশা’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আখেরি রাস্তা’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘মা যখন বিচারক’, ‘অনন্ত ভালবাসা’, ‘কিলার’, ‘সত্যের বিজয়’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘বলো না ভালোবাসি’, ‘বৃষ্টি ভেজা আকাশ’, ‘কথা দাও সাথী হবে’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘দ্য স্পিড’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘এক মন এক প্রাণ’, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’।

সোহানুর রহমান বেশ কয়েকবার চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে কাফনের কাপড় পরে হিন্দি ছবি আমদানির বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২১-২৩ মেয়াদে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি।

আরো পড়ুন : এডিসি হারুন কান্ডে পুলিশ কর্মকর্তারা চান এপিএস আজিজুলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *