আয়ুর্বেদ শব্দটি হলো দুটি সংস্কৃত শব্দের সংযোগে সৃষ্টি-যথা ‘আয়ুষ’, অর্থাৎ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ অর্থাৎ ‘বিজ্ঞান’। যথাক্রমে আয়ুর্বেদ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘জীবনের বিজ্ঞান’। এটি এমনই এক চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে রোগ নিরাময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়। তবে রোগ নিরাময় ব্যবস্থা করাই এর মূল লক্ষ্য। যা একমাত্র সম্ভব প্রাকৃতিক গাছের ফুল, মূল, ফল বা ভিবিন্ন উদ্ভিদের নির্জাস শরীরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে। প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যই সুখের মূল চাবিকাঠি হিসেবে দরে রাখতে একজন মানুষের শরীরে পরিমানমতো প্রোটিন, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ প্রয়োজন। শরীরের এই প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধানে মধু, সজনে পাতা, চিয়া সীড, সোনা পাতা, অর্শ্বগন্ধা এবং শতমূলের সমন্বয়ে এক মাসের একটি প্যাকেজ নিয়ে আসছে “ভেসজ সুপার ফুড”। আজ ওকে নিউজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডট কম (oknews24bd.com) এর পাঠকদের জানাব মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের শেফাদানকারী মহৌষধ সোনা পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক এবং সেটি খাওয়ার নিয়ম।
রসুলে পাক (সা.) এরশাদ করলেন, ‘যদি কোনো জিনিসের দ্বারা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যেত তবে তা সোনাপাতার দ্বারা পাওয়া যেত।’ তোমরা অবশ্যই সোনাপাতা ব্যবহার করবে, কেননা এটা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের শেফাদানকারী মহৌষধ।’ – ( আত-তিরমিযী, হাদিস নং ২০৩১) ।
বাংলা নাম: সোনা পাতা, সোনামুখী, ইংরেজী নাম: Senna, Tinnevelly Senna, বৈজ্ঞানিক নাম: Cassia angustifolia Vahl. পরিবার: Caesalpiniaceae, আরবি নাম: সোনামাক্কী, ব্যবহার্য অংশ: পাতা, ফুল ও ফল। তবে পাতার ব্যবহারই বেশী।
পরিচিতি: গাছ বীরুৎ জাতীয়। পাতা পক্ষল যৌগিক অর্থাৎ অক্ষের উভয় পাশে পাতা থাকে। পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদী পাতার মত। পাতার রং কাঁচা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ এবং শুকনো হলে হলুদাভ সোনালী বর্ণ হয়। অক্ষের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ মাথার হলুদ রঙের ফুল ফোঁটে। ফুল সাদা বা গোলাপী রঙেরও হয়। ফল শিম জাতীয় নলাকার বা চ্যাপ্টা হয়। ফলের ভিতরে আড়াআড়িভাবে বীজ থাকে।
প্রাপ্তিস্থান/ আবাস স্থল: উষ্ঞমন্ডলীয় দেশ সমূহে বেশী জন্মে। সুদান, সোমালিয়া, সুন্ধুপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যিক ভবে চাষ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে সহ উপমাহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনাপাতা বেশ দেখা যায়। আরব দেশের জঙ্গলে সোনাপাতা প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।
রাসায়নিক উপাদান: সোনা পাতায় আছে ১.৫-৩% হাইড্রোজায়ানথ্রাসিন গ্লাইকোসাইড, প্রধানত সেনোসাইড এ এবং বি যা রেইন-হায়ানথ্রোন এবং কম পরিমাণে সেনোসাইড সি এবং ডি যা রেইন-এলো-ইমোডিন-হেটেরোডায়ানথ্রোন, ন্যাপথলিন গ্লাইকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েড(কেম্পফেরল এবং আইসো-রামানিটিন এর ডেরিভেটিভ), ১০-১২% খনিজ উপাদান, ৭-১০% মিউসিলেজ(গ্যালাক্টোজ, এরাবিনোজ, রামনোজ এবং গ্যালাকটিউরোনিক এসিড), প্রায় ৮% পলিঅল (পিনিটল); সুগার(গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ) এবং রেজিন।
সোনা পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলির কারণে এটা প্রধানত জোলাপ বা রেচক হিসেবে বেশী ব্যবহৃত হয়। কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করতে চমৎকার কাজ করে। সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে উদ্দীপনা যোগায় এর কারণ হল সেনোসাইড এবং রেইন এনথ্রোন হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। রেচক (Laxative effect) বা শীতলকারক হওয়ার ফলে বৃহদন্তে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় যা ইনটেস্টাইন্যাল উপাদান গুলোর ভলিউম এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়।
কমিশন ই(E) কোষ্ট-কাঠিন্য নিরাময়ের জন্য সোনাপাতা গ্রহণের অনুমতি দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মাঝে মধ্যে সংঘটিত কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করার জন্য স্বল্প সময়ের চিকিৎসা হিসেবে সোনাপাতা ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এছাড়া পায়ু পথের সমস্যা দূর করতে, অর্শের সমস্যায়, অপারেশনের পূর্বে ও পরে পেট পরিষ্কার রাখতে সোনাপাতা ব্যবহার করা হয়।
সোনাপাতায় বিদ্যমান ইমোডিন বিভিন্ন পরিমাণে চিকিৎসায় ব্যবহা করা হয়। প্রদাহ নাশ করতে ১৫ মি.গ্রা./ কেজি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এন্টি সেপটিক ও এন্টি আলসার হিসেবেও এটা কাজ করে।
এন্হ্রাকুইনোন সাইটোটক্সিক এবং কোষ পুনরুদ্ধার-এ রিজেনারেশনে উদ্দীপনা জাগায়, ডিটক্সিফিকেশন এবং পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে।
সোনাপাতার নানা বিধ ব্যবহারের মথ্যে রয়েছে-ক্ষুধা কমায়, যকৃত বিকৃতি, প্লীহা বিকৃতি, বদহজম, ম্যালেরিয়া তকের বিভিন্ন সমর্সা জন্ডিস এবং এনিমিয়।
ইসলামে সোনাপাতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে-
হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করেন, “ আপনি জুলাবের জন্য কি ব্যবাহা করেন? তখান হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি শিবরমের নাম বলেন। তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন “এটাতে খুবই গরম” অতএব হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, “আমি সেনা দ্বারা জুলাব নেই।“ তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন, “ যদি কোন জিনিসের দ্বারা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যেত, তবে তা সেনার দ্বারা পাওয়া যেত।” অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন উনি এরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা অবশ্যই সেনা ব্যবহার করবে, কেননা এটা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শেফাদানকারী মহৌষধ।”
সেবন বিধি:
সোনাপাতা লিকুইড বা শুকনো পাউডার আকারে ব্যবহার করা হয়। কোষ্ঠ-কাঠিন্যে গড়ে প্রতিদিন ২০-৪০ মিলি গ্রাম সেনোসাইড ক্যাপসুল সেব্য।
চিবিয়ে খাওয়ার জন্য যে ট্যাবলেট(১৩ মিলি গ্রাম সেনোসাইড)- প্রাপ্ত বসস্ক এবং ১২ বছরের শিশুদের জন্য ২টি ট্যাবলেট দিনে ১ বার ২ বার সেব্য।
দানাদার (১৫ মিলি গ্রাম সেনোসাইড প্রতি চা চামচ)- প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১২ বছরের শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১ চা চামচ করে সেব্য।
তরল (৮.৮ মিলি গ্রাম সেনোসাইড প্রতি চা চামচ)-৬ থেকে ১২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য ১ থেকে ১.৫ চা চামচ দিনে একবার করে সেব্য।
পিল-প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১২ বছর বয়সের শিশুদের বা তার থেকে বেশী বয়সীদের ২টি করে পিল দিনে একবার বা দু’বার একগ্লাস পানির সাথে সেব্য।
ট্যাবলেট (৮.৬ মিলি গ্রাম সেনাসাইড)- প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১২ বছরের শিশুদের জন্য ২টি ট্যাবলেট দিনে একবার অথবা ৪টি ট্যাবলেট দিন ২ বার সেব্য।
ট্যাবলেট (১৭ মিলি গ্রাম, সেনোসাইড)- প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১২ বছরের শিশুদের জন্য ১টি ট্যাবলেট দিনে একবার অথবা সর্বোচ্চ ২টি ট্যাবলেট দিনে ২ বার।
বিরুদ্ধ ব্যবহার/ সতর্কতা:
অন্ত্রের কোন রোগ থাকলে, যেমন-অন্ত্রের প্রদাহ, আলসার, এপেনহিসাইটিস ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে সোনাপাতা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং ৫ বছরের নিচের বাচ্চদের এই হার্বস ব্যবহার করা উচিত নয়।
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া:
উচ্চ মাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে শরীরে পটাশিয়াম লেভেল কমে যায়। পটাশিয়াম লেভেল কমে গেলে এই অবস্থাকে বলে হাইপোক্যালিমিয়া। হাইপোক্যালমিয়া হলে নিম্নলিকিত লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে-
*পেটে ব্যথা *কোষ্ট-কাঠিন্য *লো ব্লাড প্রেশার *গোস্ত পেশীর দূর্বলতা *বমি বমি ভাব *বমি হওয়া *দৃষ্টি ভ্রম *শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে *হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন দেখ দেয়
দীর্ঘ সময় ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, হাড় বা গোস্তপেশী দূর্বল হয়ে পরে এবং ক্ষধা কমে যাওয়ার করণে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ব্যবহারের ফলে পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
সেনাতে বিদ্যমান এনথ্রাকুইনোন-এর করণে ইস্তঞ্জা (প্রস্রা)লাল, গোলাপী বা বাদামী রঙের হতে পারে এবং ইনটেসটাইনের ভিতরের প্রাচীরে পিগমেন্ট জমা হয়ে প্রাচীর আরও পুরু হয়ে যেতে পারে। এরকম অবস্থায় সোনা পাতা ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
সংরক্ষণ পদ্ধতি:
সোনা পাতা শুকিয়ে পলিথিনে ভরে মুখ বন্ধ করে শুষ্ক স্থানে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। এ ভাবে প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষন করা সম্ভব।
সোনা পাতা’র খুচরা মূল্য তালিকা
১০০ গ্রাম=১০০টাকা
২০০ গ্রাম=১৮০টাকা
২৫০ গ্রাম=২২০টাকা
৪০০ গ্রাম=৩৫০টাকা
৫০০ গ্রাম=৪৩০টাকা
০০০ গ্রাম=৮২০টাকা
শতমূল খুচরা মূল্য তালিকা
১০০ গ্রাম= ১৫০টাকা
২০০ গ্রাম= ২৭৫টাকা
২৫০ গ্রাম= ৩৫০টাকা
৪০০ গ্রাম= ৪৫০টাকা
৫০০ গ্রাম= ৬০০টাকা
১০০০ গ্রাম= ১০৫০টাকা
অশ্বগন্ধা’ খুচরা মূল্য তালিকা
১০০ গ্রাম= ১৫০টাকা
২০০ গ্রাম= ২৭৫টাকা
২৫০ গ্রাম= ৩৫০টাকা
৪০০ গ্রাম= ৪৫০টাকা
৫০০ গ্রাম= ৬০০টাকা
১০০০ গ্রাম= ১০৫০টাকা
চিয়া সীড এর খুচরা মূল্য তালিকা
১০০ গ্রাম=১০০টাকা
২০০ গ্রাম=১৮০টাকা
২৫০ গ্রাম=২২০টাকা
৪০০ গ্রাম=৩৫০টাকা
৫০০ গ্রাম=৪৩০টাকা
১০০০ গ্রাম=৮২০টাকা
সুপার ফুড সজনে পাতার গুড়া খুচরা মূল্য তালিকা
১০০ গ্রাম=১০০টাকা
২০০ গ্রাম=১৮০টাকা
২৫০ গ্রাম=২২০টাকা
৪০০ গ্রাম=৩৫০টাকা
৫০০ গ্রাম=৪৩০টাকা
১০০০ গ্রাম=৮২০টাকা
খাঁটি মধুর খুচরা মূল্য তালিকা
খাটি সরিষা ফুলের মধু ১০০০ গ্রাম=৬০০টাকা
খাটি লিচু ফুলের মধু ১০০০ গ্রাম=৭০০টাকা
খাটি চাকের মধু ১০০০ গ্রাম=৮০০টাকা
খাটি পাহাড়ি চাকের মধু ১০০০ গ্রাম=৯০০টাকা
খাটি বড়ই ফুলের মধু ১০০০ গ্রাম=১০০০টাকা
খাটি সুন্দর বনের মধু ১০০০ গ্রাম=১০০০টাকা
খাটি কালজিরা ফুলে মধু ১০০০ গ্রাম=১২০০টাকা
আরো পড়ুন : উদ্ধার কাজ চলমান থাকার পরেও সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক