যানজটের নগরী ঢাকায় স্বস্তির নাম হয়ে এসেছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথ চালু হওয়ায় দিনে স্বস্তিতে যাতায়াত করছেন দুই থেকে আড়াই লাখ যাত্রী। সকাল-সন্ধ্যা মেট্রোরেল চলাচল করায় নিচে সড়কে গণপরিবহনে চাপ কমেছে। কমেছে যাত্রী। কিন্তু পুরনো বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে আগের মতোই। উপরে মেট্রোরেলে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। কিন্তু স্টেশনগুলোতে বিশৃঙ্খলা নেই। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রী। সড়কে যান এবং যাত্রী কমলেও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরেনি একটুও। মতিঝিল থেকে মিরপুর ১২ পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা গেছে মোড়ে মোড়ে যানজট আর বিশৃঙ্খলার চিত্র।
বিশেষ করে পুরানা পল্টন, কাওরানবাজার, ফার্মগেট ও মিরপুর-১০ এলাকায় বিশৃঙ্খলার চিত্র সবচেয়ে বেশি। এদিকে যানজট কমেছে আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকার।
ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন এই রুটে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সবচেয়ে বড় সমস্যা বাসের যাত্রী সংকট। মেট্রোরেলের কারণে বাসের যাত্রী কমেছে। এই রুটের বাসগুলো যাত্রীর আশায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়া হলেও বাসগুলো যাত্রী তুলে ধীরে ধীরে যায়। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং না থাকার কারণে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। এছাড়া যত্রতত্র রিকশা, ভ্যান, বাস দাঁড়িয়ে থাকা ও উল্টোপথ দিয়ে যানবাহন চলায় রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর একটি পুরানা পল্টন মোড়। গুলিস্তান, মতিঝিল, বিজয়নগর ও প্রেস ক্লাবকে সংযোগ করে সড়কটি। প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের হাজার যানবাহন এই সড়কে চলাচল করে। পুরানা পল্টনের উপর দিয়ে মেট্রোরেল গেলেও নিচের সড়কে বিশৃঙ্খলা লেগেইে থাকে। এতে সৃষ্টি হয় যানজটের। বাসে যাত্রী নেয়ার জন্য হাঁকডাক আর ধীর গতিতে গাড়ি চালান চালকরা। কখনও কখনও অন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষিও করে। এছাড়া মোড়টিতে কোনো ফুটওভারব্রিজ না থাকায় যখন-তখন হেঁটেই রাস্তা পার হন পথচারীরা। পল্টন পুলিশ বক্সের ট্রাফিক সার্জেন্ট কুদ্দুছ আলী বলেন, এখন মেট্রোরেলের জন্য বাসযাত্রী পায় না। তাই বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। এতে বেশি সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীর আশায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা তাদের মামলা দেই, রেকার হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। তারা সচেতন না। অনেক চালক আছে যারা লেখাপড়া করেনি। সড়কের নিয়মকানুন জানে না। তাদের বললেও শুনতে চায় না। আইনগত ব্যবস্থা নিলেও কাজ হয় না। প্রত্যেক গাড়িতেই কোনো না কোনো মামলা থাকে। আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা একটু সরে এলে তীব্র যানজট লেগে যায়। তারপরও যতোটুকু সম্ভব চেষ্টা করি। পল্টনে সাভার পরিবহনের বাসের হেলপার সোহেল বলেন, এখানে সব সময় বাসের ধাক্কাধাক্কি হয়। মোড়ে দুই-একটা বাস দাঁড়িয়ে পড়লে পিছনের গাড়িগুলো যেতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি এলাকায়ও বিশৃঙ্খলার চিত্র রয়েছে আগের মতোই। কোনো ট্রাফিক না থাকার কারণে সেখানে ইচ্ছামতো গাড়ি চলাচল করে। ফুটওভারব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থী ও পথচারীরা রাস্তা দিয়েই হেঁটে পার হচ্ছেন। এতে যানবাহনগুলো চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। শাহবাগ এলাকায়ও যাত্রী তোলার জন্য বাসের রেষারেষি দেখা যায়। চালকরা জানিয়েছেন, মোড়টিতে আগের চেয়ে যানজট কিছুটা কমেছে। তবে বাংলামোটর, কাওরানবাজার ও ফার্মগেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়েও বাসগুলোর ধীরগতি দেখা যায়। সাগর নামের এমএম লাভলী পরিবহনের এক হেলপার বলেন, যাত্রীরা মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের উঠানোর জন্য মোড়ে স্লো করতে হয়। তখন যাত্রী নামিয়ে স্লো করি। মোড় থেকে দূরে গাড়ি থামালে সেখানে যাত্রীরা নামতেও চায় না। তবে ফার্মগেট-বিজয় সরণির পর আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকার চিত্র ভিন্ন। এসব এলাকার মোড়ে গাড়ির চাপও আগের চেয়ে কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে বিশৃঙ্খলাও।
মিরপুর-১০ গোলচত্বর এর উত্তর পাশে মেট্রোরেলের স্টেশন। সেখানে প্রতিনিয়ত যাত্রী ওঠা-নামা করছেন। তবে গোলচত্বরেও সিগন্যালে পড়ে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে থাকে। সিগন্যাল ছাড়া হলেও রাস্তার মাঝ থেকেই বাসে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। গোলচত্বরে পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার করেন না অনেকে। রাস্তার গাড়িগুলোকে হাতের ইশারা দিয়ে থামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এতেও মোড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শিকড় পরিবহনের হেলপার ওসমান গনি বলেন, সিগন্যাল ছাড়লেও মানুষ সামনে দৌড় দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের গাড়ি থামিয়ে দিতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা হলে পরে ড্রাইভারের দোষ হবে। বাসের যাত্রী আগের চেয়ে কমেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে যাত্রী কম। আগে সিট ভরে দাঁড়িয়ে থাকতো অনেকে। কিন্তু এখন তেমন নেই। আমরা রাস্তা থেকে যাদের পাই তুলে নেই।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এই রুটের গণপরিবহনে এখন যাত্রী কমে গেছে। ইতিমধ্যে আমরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। কেউ যদি অরাজকতা করে, লেন বন্ধ করে কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও আনা হবে। আমরা মানুষকে সচেতন করি। তাদের সচেতন হতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে সবাই যদি নিয়ম মেনে চলে তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এটার ইতিবাচক প্রভাব থাকবে।
আরো পড়ুন : রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টে যুক্ত হলো চাইনিজ মুদ্রা ‘ইউয়ান