জনগণের তীব্র দুর্ভোগের জন্য দায়ী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি-২০১৭-১৮’ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই নির্দেশনা দেন। খবর বাসসের
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে রাজধানীর রেডিসন ব্লু-র’ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এতে সভাপতিত্ব করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে যাতে কিছু অসাধু লোকের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়। একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে, সরবরাহ এবং চাহিদার অবস্থা বিবেচনা করে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয়হীনতা নয় বরং কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে রমজান ও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের আগমনে দেখা যায় কোনো কোনো পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণত জাতীয়, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব উপলক্ষে পণ্যের দাম কমে যায়।
রাষ্ট্র প্রধান উল্লেখ করেন, ‘এখানে কোনো উৎসব এলেই দেখা যায়, উৎসবকে পুঁজি করে কীভাবে জনগণের পকেট কাটা যায়, তা দেখার অপেক্ষায় থাকে ক্ষুদ্র ও দানব ব্যবসায়ীদের একটি অংশ।’
রাষ্ট্রপতি পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুদ ও ঘাটতির সঠিক তথ্য-উপাত্ত সতর্কতার সাথে সংগ্রহ করে আগাম বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন যাতে কোনো দুষ্ট চক্র কারসাজির মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ বাড়াতে না পারে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, আমলা এবং সরকার কর্তৃক সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার উপরও জোর দেন রাষ্ট্র প্রধান।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা সর্বাগ্রে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার কখনো কারো কাজে হস্তক্ষেপ করতে চায় না, কিন্তু বিপুল মুনাফার লোভে যখন জনস্বার্থ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন সরকার কোনো না কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। .
ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসাকে একটি উত্তম পেশা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী, উৎপাদক, বিনিয়োগকারী বা রপ্তানিকারক হিসেবে সমাজের প্রতিও আপনার দায়িত্ব রয়েছে। জনগণের কষ্টের কথা না ভেবে শুধু নিজেদের লাভের কথা ভাবলে চলবে না। জনগণ চায় আপনি যুক্তিসঙ্গত মুনাফায় ব্যবসা করুন। আমাদের রাতারাতি ধনী হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে এবং ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
আবদুল হামিদ বলেন, জনগণ যাতে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার শিকার না হয় এটাই তাদের প্রত্যাশা।
দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও উন্নয়নশীল রাখতে রপ্তানিকারকদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি’ শিরোনামের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ‘মর্যাদাপূর্ণ’ বলে উল্লেখ আবদুল হামিদ বলেন, এই ট্রফি অন্যান্য রপ্তানিকারকদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রপ্তানি নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে এবং রপ্তানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করি, রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারব এবং সর্বোপরি জাতীয় আয়ও বাড়াতে পারবো।’
রাষ্ট্রপতি উচ্চমূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সম্প্রতি সবজি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, প্রচলিত কৃষির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি পুরস্কারপ্রাপ্ত জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম রফিকুল ইসলাম নোমান এবং ইপিবি’র ভাইস-চেয়ারম্যান মো. এএইচএম আহসান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রপ্তানি খাতে অসামান্য অবদানের জন্য ৬৬ টি কোম্পানির হাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ-ক্যাটাগরিতে ৬৬ টি ট্রফি তুলে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন : প্রযুক্তি যেমন সুযোগ তৈরি করে, তেমনি সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে