সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপের নেতাকর্মীর ওপর প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র প্রাঙ্গণে অসহায়দের মধ্যে ইফতার বিতরণের সময় প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ১০ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা খন্দকার মো. সাঈদ হূদয় ও তাঁর অনুসারীরা গতকাল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মো. শরীফ হোসাইন ও আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সাঈদসহ অন্তত ছয়জনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ফের হামলা চালান মো. শরীফের অনুসারীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে অন্তত ১০ জন আবাসিক ছাত্রের বিছানাপত্র, কাপড়সহ জিনিসপত্র হল থেকে ছুড়ে ফেলে তাঁদের হল ত্যাগে বাধ্য করেন।
ছাত্রলীগ কর্মী মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘ইফতার শেষে আমি টিউশনি করাতে চলে যাই। এসে দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আমার ৪০৪ নম্বর রুম থেকে বিছানাপত্র ও কাপড় বাইরে বৃষ্টির পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমার মতো আরো অনেকের সঙ্গে একই কাজ করা হয়েছে। কেউ সেগুলো তুলে আনতে গেলে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। ’
হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতা সাঈদ হূদয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের পক্ষ থেকে আমরা শতাধিক অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছিলাম। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মো. শরীফ হোসাইন, আশিকুর রহমান, সাব্বির মোল্লা ও এ কে এম কামরুজ্জামান পিন্টুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে এবং অন্তত পাঁচজন কর্মীকে কমবেশি আহত করে। ’ হামলার আগে অর্ধশত প্যাকেট ইফতারি বিতরণ করা হলেও বাকিগুলো তারা ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অসহায় যারা এসেছিল ইফতারি নিতে তাদেরও ছত্রভঙ্গ করে দেয় তারা। ’ হামলার কারণ সম্পর্কে জানেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে তাদের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা বা দ্বন্দ্ব ছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই হয়তো তারা এই হামলা করেছে। ’
তবে হামলার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা মো. শরীফ হোসাইন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কিংবা হল থেকে কাউকে বের করে দেওয়া বা জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। ’ ১০ জন ছাত্রকে হল থেকে বের করে দিলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যেত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মূলত হলে কয়েকজন ব্যাচম্যাটের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা তাদের গিয়ে বলেছি হলের মধ্যে কোনো গ্যাঞ্জাম করা যাবে না। বাইরে গিয়ে এসব সমস্যা সমাধান কর। এর বেশি কিছু না। ’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তরিকুল ইসলাম রাত ১১টার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটখাটো একটা সমস্যা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সমাধানে কাজ করছি। ’ হল থেকে ১০ ছাত্রকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে জানার জন্য এবং সমাধানের জন্য আমরা এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান করছি। এখানে হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আছেন। যাই ঘটুক এটা সমাধান হয়ে যাবে আশা করছি। বড় কিছু হবে না। ’
আরো পড়ুন : জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘পতিতা’ থেকে ‘গৃহিণী’ হলেন তাঁরা