ভারতের মুম্বাই থেকে দুর্গাপুরে যাচ্ছিল দেশটির বেসরকারি বিমান সংস্থা স্পাইসজেটের একটি উড়োজাহাজ। যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে আরোহী ছিলেন প্রায় ২০০ জন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে ঘটে বিপত্তি। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে নাকাল হয়ে পড়েন সবাই। এতে আহত হয়েছেন উড়োজাহাজটির অন্তত ১৭ আরোহী।
গত রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মুম্বাই বিমানবন্দর ছেড়ে যায় বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজটি। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন অমিত বাউল নামের একজন ব্যবসায়ী। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে সেদিনের বিমানযাত্রার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
অমিত বাউল বলেন, তাঁর বাড়ি দুর্গাপুরে। গত চার মাসে বেশ কয়েকবার মুম্বাই-দুর্গাপুর রুটে উড়োজাহাজে যাতায়াত করেছেন তিনি। কোনো দিন সমস্যায় পড়তে হয়নি। গত রোববারও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। যাত্রীরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
মুম্বাই থেকে দুর্গাপুরে উড়োজাহাজে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার কাছাকাছি। রোববার স্পাইসজেটের উড়োজাহাজটি অবতরণের আগে সামান্য ঝাঁকুনি অনুভব করেন অমিত। সবকিছু স্বাভাবিক ভেবে সিটবেল্ট বেঁধে নেন তিনি। তবে উড়োজাহাজটি নিচে নামতে শুরু করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। অমিত বলেন, যাত্রার শেষ ১৫ থেকে ১৭ মিনিট ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়।
ওই সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি জানতাম না যে আমরা ঝড়ের কবলে পড়লাম কি না। উড়োজাহাজটি ওপরে-নিচে ও ডানে-বাঁয়ে ঘুরতে শুরু করে। মনে হচ্ছিল এটি একটি রাবারের বল।’
নিজেকে সামালে নিতে এ সময় সিটবেল্ট আরও শক্ত করে বেঁধে নেন অমিত। তিনি বলেন, ‘এমন যেন আমাকে ১০০ তলা ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এরপর সেকেন্ডের মধ্যেই আবার ওপরে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছিল।’
এদিকে অনেক যাত্রীই সিটবেল্ট বাঁধতে ভুলে গিয়েছিলেন। ফলে ঝাঁকুনিতে তাঁরা মারাত্মকভাবে আহত হন। অমিতের পাশে বসা দুই যাত্রীও আহত হয়েছিলেন। তাঁদের সামনেই ১১ বছরের মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন এক নারী। তাঁরা সিট থেকে ছিটকে পড়েন। দুজনেরই মাথায় আঘাত লাগে। এতে ওই নারী আহত হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।
অমিত বলেন, উড়োজাহাজের যাত্রীরা সবাই কাঁদছিলেন, আর চিৎকার করছিলেন। খাবারের উচ্ছিষ্ট আর পানীয়ের কাপগুলো ছিটকে আসছিল। কয়েকটি সিটের অংশও ভেঙে যায়। এতে অনেকেই আঘাত পান। এর মধ্যেও পাইলট সবাইকে সিটবেল্ট বাঁধার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলেন।
হঠাৎ উড়োজাহাজের ছাদের দিকে চোখ পড়লে রক্তের ছাপ দেখতে পান অমিত। তিনি বলেন, ‘একসময় মনে হয়েছিল, আমি আর বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। তবে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় যখন অবতরণ করলাম, মনে হলো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।’
অবতরণের পর উড়োজাহাজের যাত্রীরা পাইলটকে ধন্যবাদ জানান। তবে আরও খারাপ কিছু তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বিমানের ওই ওঠা-নামায় আহত ব্যক্তিদের নিতে এক ঘণ্টা পর বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স আসে।
বিমানবন্দরে কোনো চিকিৎসকের উপস্থিতি চোখে পড়েনি বলে জানান অমিত। অভিযোগ করে বলেন, একজন শুধু আহত ব্যক্তিদের ব্যথানাশক ওষুধ দিচ্ছিলেন ও ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছিলেন। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় হুইলচেয়ারও ছিল কম। এটা পরিষ্কার যে দুর্গাপুর বিমানবন্দরে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবার ঘাটতি রয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, অবতরণের আগে উড়োজাহাজটির স্বয়ংক্রিয় পাইলট (অটো-পাইলট) ব্যবস্থা দুই মিনিটের জন্য অকেজো হয়ে যায়। ফলে পাইলটদের উড়োজাহাজটি চালানোয় হাত লাগাতে হয়।
আরো পড়ুন : ছোটগল্প; সত্যিই মজিবর আর দুলজানদের বয়স বেড়ে গেছে!