আজ জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন

অর্থনীতি জাতীয় প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

জাতীয় সংসদে আজ বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট এটি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। কালের পরিক্রমায় সেই বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিগত পাঁচ দশকে দেশের অর্থনীতির অভূতপূর্ব এই উন্নয়ন দেশকে নিয়ে এসেছে নতুন এক মর্যাদায়। বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ। এক সময়ের ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

সংগত কারণেই বাজেটের আকার প্রতি বছরই বাড়ছে। সরকারের বাজেট প্রণয়নের ওপরে তাই সব মহলের তীক্ষ্ণ নজর থাকে। সাধারণ মানুষের মূল আগ্রহ থাকে জাতীয় বাজেটে নতুন কী থাকছে, দাম বাড়ছে কোন কোন পণ্যের, আর দাম কমবেই-বা কোন পণ্যের। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে।

এবারের বাজেটে সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়টি উঠে আসবে। তাছাড়া করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্নকরণ, অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা, ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লি উন্নয়ন, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসবে।

এবার সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় মোট ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এটা পুরো বাজেটের ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, আর জিডিপির ২ দশমিক ৬০ শতাংশের সমান। বিদায়ি অর্থবছরের তুলনায় এই ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এবার অভ্যন্তরীণ কৃষি ও শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্ব দেবেন অর্থমন্ত্রী। বিশেষ করে কৃষকদের উত্সাহিত করতে কৃষি খাতে এবার রেকর্ড ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন ও সারে ভতু‌র্কিতে এই টাকা ব্যয় করা হবে। এর পাশাপাশি বাজেটের আওতায় নগদ দেওয়া হবে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা।

অপরদিকে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তায় ভর্তুকি বরাদ্দ থাকছে আরো ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বছর জুড়ে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় সারা দেশে ১ কোটি পরিবার তথা ৫ কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে। অন্যান্য খাতেও ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকির মাধ্যমে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাকা গতিশীল রাখার লক্ষ্য সরকারের। এর জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পে নগদ প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ থাকছে ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এবার সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd-এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে। বাজেট উপস্থাপনের পরদিন অর্থাৎ আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায়, বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসবেন অর্থমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এবার সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুনি : নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *