ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘ ঐতিহ্যের ভিত্তিতে আধুনিক সংসদীয় গণতান্ত্রিকব্যবস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদে আলোচনায় রয়েছেন বরিস জনসনের সমালোচক থেকে শুরু করে তাঁর সদ্য সাবেক ও বর্তমান সহকর্মীসহ অনেকেই।
বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে সর্বোচ্চ ৩৫৮ আসন রয়েছে বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টির (রক্ষণশীল)।
ক্ষমতাসীন এই দলের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আইন প্রণেতারা এরই মধ্যে সক্রিয় হয়েছেন। নেতা হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সাবেক স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে নিয়ে। শোনা যাচ্ছে, টোরি (রক্ষণশীল দলের ঘরোয়া নাম) এমপিদের কাছ থেকে তিনিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাচ্ছেন।
নানা সমালোচনায় বিদ্ধ বরিস জনসনের বিরুদ্ধে টোরি এমপিদের মধ্যে পেছনের সারির আইন প্রণেতারা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এমপি টম টুগেনধাট প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রাভারম্যান আগেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আলোচিতদের তালিকায় বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, সদ্য পদত্যাগী অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাকসহ অনেকেই রয়েছেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণকারী সংস্থা ইউগভ টোরি এমপিদের মধ্যে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে দাবি করেছে, বেন ওয়ালেস রক্ষণশীল এমপিদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন।
২০১৯ সালে রক্ষণশীলদের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জেরেমি হান্টকে প্রায় দ্বিগুণ ভোটে পরাজিত করেছিলেন বরিস জনসন।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীলদের একটি অংশের বিরোধীতা সত্ত্বেও বরিস জনসন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে উল্লেখ করেছেন টোরি এমপিদের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘১৯২২ কমিটির’ ট্রেজারার স্যার জেফরি ক্লিফটন-ব্রাউন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সত্য মানতে হবে যে উত্তরসূরি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন। ’ ক্লিনটন ব্রাউন আরো জানান, নেতৃত্ব নির্বাচনসংক্রান্ত সময়সীমা আগামী সপ্তাহে জানানো হবে। সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।
টোরি দলের এমপিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ‘১৯২২ কমিটি’। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর পর কয়েক দফার ভোটাভুটিও তারাই তদারকি করে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে রক্ষণশীলদের নেতৃত্ব নির্বাচনের পর্বে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে এই কমিটি।
তবে লেবার পার্টি এরই মধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছে যে তারা জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের চেষ্টা করবে। তবে এ ধরনের তত্পরতা সফল করতে হলে টোরি এমপিদের একটি অংশের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
এদিকে ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারিকালে লকডাউন বিধি ভাঙার একটি অভিযোগ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা কেয়ার স্টার্মার এবং তাঁর ডেপুটি অ্যাঞ্জেলা রায়নারকে অব্যাহতি দিয়েছে পুলিশ। দুজনই অঙ্গীকার করেছিলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানা হলে তারা পদ ছাড়বেন। উল্লেখ্য, প্রবল সমালোচিত ‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারির’ কারণে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জরিমানা গুনতে হয়েছিল বরিস জনসনকে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি