বিশেষ প্রতিবেদক: প্রায় এক মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কলোনিতে এক পরিত্যক্ত বাসায় সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় জড়িত এক রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর বেশভূষা পাল্টে ফেলায় আসামিকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। কিন্তু তিনি যে রিকশা চালাতেন তার পেছনের অংশে ‘ময়ূর’ ও ‘সাপের’ একটি চিত্রাঙ্কন আছে। সেই চিত্রাঙ্কনের সূত্র ধরেই রিকশাচালককে শনাক্ত করা হয়।
গত বুধবার (১২ অক্টোবর) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়া এলাকা থেকে ওই আসামিকে বন্দর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত রিকশাচালকের নাম ওসমান হারুন মিন্টু (৪৪)। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। চট্টগ্রাম নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর সড়কে একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে তিনি আগ্রাবাদ-সিডিএ এলাকায় চালাতেন।
ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে ধর্ষণ ও খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে পোর্ট কলোনি থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, সুরমাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল এবং আশপাশের আরো চার-পাঁচটি সড়কে থাকা কমপক্ষে ৩০০ সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে এক রিকশাচালককে সন্দেহ করা হয়। তবে কোনোমতেই রিকশাচালকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
গ্রেপ্তারের পর ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদুর বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর নিজের বেশভূষা পাল্টে ফেলেছিলেন রিকশাচালক ওসমান। আগে লুঙ্গি পরে রিকশা চালালেও পরে তিনি প্যান্ট-শার্ট পরে রিকশা চালানো শুরু করেন এবং মুখে দাড়ি রেখে দেন। ’
ওসমানকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া বন্দর থানার আরেক এসআই কিশোর মজুমদার বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন চালকের রিকশার পেছনে একটি ময়ূর ও সাপের ছবি আছে। এবার আমরা খবর নিতে শুরু করি এই শহরে কে কে রিকশায় ময়ূর-সাপ আঁকেন। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘একজন পেইন্টারের সন্ধান পাই, তিনি জানান সিডিএ ২৫ নম্বরে একটি গ্যারেজে তিনি ময়ূর-সাপ আঁকা রিকশার বডি সরবরাহ করেন। যেহেতু ঘটনাস্থলের কাছের এলাকা, আমাদের সন্দেহ আরো বাড়ে। সেই গ্যারেজে গিয়ে যত রিকশা পাই, তার সবটার পেছনের বডিতে ময়ূর-সাপ আঁকা। ’
এসআই কিশোর বলেন, ‘গ্যারেজ থেকে ভাড়া নেওয়া সব রিকশার চালককে জড়ো করে পরীক্ষার পর বেশভূষা পাল্টে ফেলা ওসমানকে শনাক্ত করা হয়। হত্যা-ধর্ষণের বিষয়ে ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসআই কিশোর জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হালিশহর কে-ব্লক থেকে শিশুটিকে রিকশায় তুলে নেন ওসমান। এরপর পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত বাসাটিতে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যা করে পালিয়ে যান। ‘
আরো পড়ুন : বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করল ময়মনসিংহ ছাত্রলীগ-যুবলীগ