ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা আদায়, অতঃপর পুলিশ সদস্যরাই রিমান্ডে

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ পুরুষ পুরুষ অধিকার পুরুষ নির্যাতন প্রচ্ছদ

পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল গত বুধবার তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশের তিন সদস্য হলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কর্মরত মুনশি আবদুর রহমান (৩০) ও শেখ ফরিদ (৩০) এবং সুনামগঞ্জে কর্মরত নাজমুল হোসেন (৩২)। তাঁদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

গ্রেপ্তার বাকি তিনজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জের জুবায়ের শিকদার (৫৩), বরিশালের আমিন খান (৩৫) এবং শরীয়তপুরের বোরহান উদ্দিন শিকদার (৩৯)। তিন কনস্টেবলসহ ছয়জনই বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন বলে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা ভুয়া সিআইডি পরিচয়ে মোহাম্মদ মাহবুব আলী নামের এক ব্যক্তিকে ধানমন্ডি থেকে অপহরণ করে নির্যাতন করেছে। মাহবুবের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাহবুব বাদী হয়ে গত ৮ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। থানা-পুলিশের হাত ঘুরে মামলার তদন্তভার পেয়েছে ডিবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ী মাহবুব আলী খান মুঠোফোনভিত্তিক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট। তাঁকে ধানমন্ডি থেকে অপহরণের পর নির্যাতন করে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা আদায় করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই অপহরণ ও অর্থ আদায়ের সঙ্গে পুলিশের তিন কনস্টেবলের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১ নভেম্বর মাহবুব ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ছিলেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ১০–১২ জন ব্যক্তি নিজেদের সিআইডি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁকে ধরে টেনেহিঁচড়ে ধানমন্ডি লেকের দিকে নিয়ে যান। মামলা রয়েছে দাবি করে তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে পল্টনের ইসলাম টাওয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। টাকা আদায়ের জন্য তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ১১টা ৫ মিনিটের দিকে মাহবুব দুর্বৃত্তদের টাকা দিতে রাজি হন। পরে পল্টন থেকে অটোরিকশায় করে তাঁকে কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বিকাশ এজেন্ট থেকে প্রথমে তিনি ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেন। পরদিন তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে পুরান ঢাকার নবাবপুরের রথখোলা মোড়ের ঈশিতা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যার হুমকি দিয়ে মাহবুবের কাছ থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে মোট ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৬০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া তাঁর তিনটি মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। শাহবাগ থানার পুরোনো একটি মামলায় ২ নভেম্বর মাহবুবকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি ৬ নভেম্বর জামিনে ছাড়া পান।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহবাগ থানার মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। ওই মামলার এজাহারে মাহবুবের নাম নেই।

ব্যবসায়ী মাহবুব মামলায় অন্য যাঁদের আসামি করেছেন তাঁদের মধ্যে জুবায়ের ও শাহজাহান সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে। তিন কনস্টেবল কেন মাহবুবকে অপহরণ করে নির্যাতন করলেন, কেন তাঁরা এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেন, সে ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

আরো পড়ুন : সেনাদের সরিয়ে নেওয়া ছাড়া মস্কোর সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *