রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে মাত্র ৪ ঘণ্টায়। সড়কপথে যানজটের ভোগান্তি এড়িয়ে রেলপথ হয়ে উঠবে দেশের দুই বড় সিটির গুরুত্বপূর্ণ কানেকটিভিটি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মধ্যবর্তী ৭২ কিলোমিটার অংশ ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। এর পরই ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথে চলবে দ্রুতগতির ট্রেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে যাতায়াত হবে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সময়সাশ্রয়ী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের লাইফলাইন খ্যাত এ যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। পুরো রেলপথটি ডাবল লাইনের আওতায় চলে এলে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে। এক শহর থেকে সকালে যাত্রা করে দিনের কাজ শেষে বিকালেই নিজ শহরে ফিরে যাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। আধা ঘণ্টায় যাতায়াতের এ রাস্তায় যানজটের কারণে কখনো কখনো ২ ঘণ্টাও লেগে যায়। অন্যদিকে ঢাকায় শাহজালাল এয়ারপোর্টে যেতে যানজটের কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম বিমানযাত্রায় লাগে ৪৫ মিনিটের মতো। অন্যদিকে বিমানযাত্রীদের দেড়-দুই ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে হয়। সব মিলিয়ে বিমানেও ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে কয়েক ঘণ্টার ধকল সইতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে রেলপথে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সুযোগে বিমানযাত্রীরাও রেলপথে আকৃষ্ট হবেন। সড়কপথের নির্ভরতা কমে যাবে। রেলপথই হয়ে উঠবে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ডুয়েলগেজ রেললাইনের মধ্যবর্তী ৭২ কিলোমিটারের আলোচিত এ প্রকল্পটি শেষ হলে আমূল বদলে যাবে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের পরিষেবা। রেলের আয় বেড়ে যাবে বহুগুণ। রেলপথ হয়ে উঠবে অসংখ্য মানুষের নিত্য যাতায়াতের অন্যতম ভরসাস্থল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে নতুন গতি আসবে। পণ্য পরিবহন হবে সময় ও মূল্য সাশ্রয়ী। পুরো রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের আওতায় আসার পর বিরতিহীন আন্তনগর ছাড়াও অন্যান্য ট্রেনের গতি বাড়বে। এ পথে উচ্চগতির ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষ কম খরচে নিরাপদে রেলপথে যাতায়াত করতে চায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে এখনই যাতায়াতের টিকিট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩১ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ হলে প্রায় ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে বলে সূত্র জানান। একই সঙ্গে একাধিক সরাসরি ট্রেনসহ আন্তনগর ট্রেন চালু করা যাবে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনের মধ্যেই এর কাজ শেষ করতে। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আরও বেশি বিরতিহীন ট্রেন চলতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ১৩টি স্টেশন রয়েছে। আগে হয়তো এসব স্টেশনে মেল ট্রেন বসিয়ে রেখে ইন্টারসিটি ট্রেনকে ক্রসিং দিতে হতো। এখন কোনো বাধা ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে ট্রেন চলতে পারবে। ফলে এ অংশে আমাদের অন্তত ৪৫ মিনিট সাশ্রয় হবে।’ প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে। ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার মধ্যে এডিবি ঋণ দিচ্ছে ৪ হাজার ১১৮ কোটি আর ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দিচ্ছে ১ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ২৬ কোটি সরকার জোগান দেবে। প্রকল্পের আওতায় ১৮৪.৬০ কিলোমিটার লাইনে ১৩টি বড় সেতুসহ মোট ৪৬টি ছোটবড় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া এ রুটে কম্পিউটারাইজড সিগন্যালব্যবস্থাসহ আখাউড়া ও লাকসাম রেলস্টেশনসহ ১১টি বি-ক্লাস রেলস্টেশন ও ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। নানা প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসছে জুনের মধ্যে আখাউড়া-লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপন সমাপ্ত হলে এ পথের পুরোটাই ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন হবে। ফলে এ পথে অতিরিক্ত আরও আন্তনগর ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এতে যাত্রা সময় কমে আসবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে যাতায়াত হবে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সময়সাশ্রয়ী। এর আগে ২০১৬ সালে আন্তনগর ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ট্রেনে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাচ্ছে। এটি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্বিতীয় বিরতিহীন ট্রেন। এর আগে প্রথম বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করে ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পর প্রথম দিকে এ রুটে যাতায়াত সময় কমে এলেও ধীরে ধীরে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যেত। বর্তমানে যানজটের কারণে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরেই রেলপথে যাত্রী বেড়েছে। এমনকি বিরতিহীন আন্তনগর ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেস ও ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট অনেক আগে থেকে অগ্রিম কিনতে হয়।
আরো পড়ুন : আপনারা আমাদের সহায়তা করুন- সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের