বিভিন্ন ইস্যুতে পরী-রাজের সংসারে চিড় ধরেছে। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত রয়েছেন। কখনো দুজনের সম্পর্ক নিয়ে অবিশ্বাস বা মারধরের অভিযোগ এনে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিচ্ছেন আবার কখনো অভিমান ভুলে এক হচ্ছেন বলেও দাবি করছেন তাঁরা। গত কয়েক দিনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের দিকে চোখ বুলালে এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে। বলতে গেলে বহু নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে চলছে রাজ-পরীমণির সম্পর্ক। অনেকেই আবার এ বিষয়ের বাইরে অন্য কিছুও ভাবছেন। কেউ কেউ এটাও বলছেন, বিদ্যা সিনহা মিমকে নিয়ে রাজের অতি উৎসাহ তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। আবার কেউ বলছেন স্রেফ স্টান্টবাজি।
মূলত বছরের শুরু থেকেই আলোচনায় রাজ-পরী। গত বছরের শেষ দিনে বিচ্ছেদের আভাস দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন পরীমণি। ইতোমধ্যে জলও ঘোলা হয়েছে অনেক। এর আগেও একবার এরকম সুর উঠিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এবারের বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন বলা যায়। রাজের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে ‘মারধরের’ অভিযোগ পর্যন্ত তোলেন পরী। সাম্প্রতিক কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন পরী। অন্যদিকে রাজও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আর সম্ভব নয়। দুজনের সম্পর্ক শেষ- এমনটি যখন ধরে নিয়েছেন অনেকেই, তখন নতুন চমক দিয়ে শিরিন শিলা পোস্ট করেন, ‘মান-অভিমান ভুলে এক হয়েছেন রাজ-পরী’। এই দাবিটা কতটা সত্যি, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। যদিও এরপর দুজনকে একই ছাদনাতলে দেখা যায় একমাত্র সন্তান রাজ্যকে নিয়ে। একসঙ্গে থাকার বিষয়টি নিয়ে পরী গণমাধ্যমকে জানান, ‘রাজ ও আমি এক বাসায়, একসঙ্গেই আছি। তবে ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্কের কী হবে, তা এখনো সঠিকভাবে বলতে পারছি না। ছেলে রাজ্যকে মাঝে রেখে আমি ও রাজ সুন্দর একটা জীবন চেয়েছি। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। রাজ বাসায় ফেরার পর তাঁকে সুন্দর একটা জীবনযাপনের জন্য বোঝাচ্ছি। তাঁর কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করার কথা বলেছি, বলছি। বিয়ে, বাচ্চার জন্মের পর আমিও তো আমার জীবনটাকে অনেক পরিবর্তন করেছি। তা আপনারা দেখেছেন। আমি পারলে সে পারবে না কেন? যদি শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক না-ই টেকে, তাহলে চাইব, রাজ যে পথেই হাঁটুক, যেখানেই থাকুক, সে যেন সুন্দরভাবে বাঁচে, সুন্দরভাবে চলে। কারণ, সে আমার সন্তানের বাবা। যাতে বাবার কারণে সন্তানের দিকে কেউ আঙুল তুলতে না পারে।’ রাজ অবশ্য সহজভাবে বলেন, ‘আমাদের সন্তানই বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস। তাকে ঘিরেই বেঁচে থাকা। যেখানেই থাকি তার টানেই ফিরতে হবে আমাকে। আর একসঙ্গে তো আছি, বিন্দাস আছি। খাচ্ছিদাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি। পরী অনেক কথা বলছে, শুনছি। আমাদের মধ্যে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। রাজ্যকে নিয়ে আমরা ভালো আছি।’
মান-অভিমান ভুলে এক হয়েছেন রাজ-পরী। তবে একসঙ্গে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাঁদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে, এটা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পরী। অবশ্য রাজের দাবি, তাঁদের মধ্যে আর কোনো সমস্যা নেই।
তবে দাম্পত্য কলহ নিয়ে তারকা অভিনেত্রী পরীমণি যতটা সরব, শরিফুল রাজ ততটাই নীরব। তবে সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটু একটু করে মুখ খুলতে শুরু করেন রাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন অজ্ঞাত গডফাদারদের প্রতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পরীর বেডরুমে রক্তমাখা বালিশের ব্যাপারটা নিয়েও চলেছে ধোঁয়াশা। পরী ব্যাখ্যা দিয়েছেন এককথা আর রাজ অন্যকথা। তবে বাসার কেয়ারটেকারের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়, পরীমণি রাজকে মেরে রক্তাক্ত করেননি সেদিন। মূলত অ্যাকুয়ারিয়াম রাখতে গিয়ে রক্তারক্তি হয়েছে। রাজ নিজেই অ্যাকুয়ারিয়াম সরাচ্ছিলেন সেদিন। সেটি পড়ে ভেঙে রাজের হাত কেটে যায়। ওই সময় রাজ্যও পাশে ছিল।
‘গুণিন’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে গিয়ে শরিফুল রাজ ও পরীমণি প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এরপর ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর ভালোবেসে শরিফুল রাজ ও পরীমণি বিয়ে করেন। প্রেম হওয়ার ঠিক সাত দিনের মাথায় তাঁরা বিয়ে করেন। এক বছরের মাথায় সন্তান পৃথিবীতে আসে। কয়েক মাস ভালো ছিলেন তাঁরা। এরপর টুকটাক কথা কাটাকাটি হলে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ার কারণে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। দুজনের প্রতি তৈরি হয় অবিশ্বাসের পাহাড়। সন্দেহ করা শুরু করেন একে অপরকে। তারপরও বারবার চেষ্টা চলে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার।
পরী-রাজ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু ১০ নভেম্বর থেকে। সেদিন পরীমণি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্বামী শরিফুল রাজ এবং অভিনেত্রী ও মডেল বিদ্যা সিনহা মিমকে ট্যাগ করে একটি স্ট্যাটাস দেন। রাজ ও মিমকে নিয়ে আলাদা আলাদা মন্তব্য করেন পরীমণি। তাঁর এমন পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর মিমও তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। এই সূত্রে পরীমণি আবার মিমের নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন। মূলত ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’-এর পর রাজ-মিমের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের আভাস পাওয়ায়ই পরীমণি খেপেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। আর যা নিয়ে এত কিছু। তার জের চলছে কয়েক মাস ধরে। অন্যদিকে, নতুন সিনেমায় কাজ করার জন্য ৩০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক চাওয়ায় রাজের ক্যারিয়ারেও চলছে টানাপড়েন। এ পরিস্থিতির জন্যই দুজনের মধ্যে এমন সম্পর্কের অবনতি বলে মনে করছে চলচ্চিত্রপাড়ার লোকজন। তবে পরী-রাজ ফের এক হওয়ায় তাদের নিয়ে মেলছে ভিন্ন জল্পনার ডালপালা। কয়েক দিন আগেও পরীমণির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ‘ম্যারিড উইথ শরিফুল রাজ’ গায়েব হলেও তা হঠাৎ করে ফের দৃশ্যমান হয়। একই অবস্থা শরিফুল রাজের বেলায়ও। অথচ দিনকয়েক আগেও এই দুই তারকাকে ঘিরে চর্চিত হয়েছে নানা গল্প। তবে এ ইস্যুগুলোকে স্রেফ একটা স্টান্টবাজি বলে ভাবছেন। ২০ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে সিয়াম-পরী অভিনীত আবু রায়হান জুয়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’। সেটির প্রচারণার জন্যই পরী এমন নাটকীয়তার জন্ম দিচ্ছেন বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রপাড়ার লোকজন। তা হলে ফের কোন জাদুবলে এক হলেন তাঁরা! এমনই নানা কৌতূহল চলছে দুজনের অনুরাগীদের মধ্যেও। সামনে দেখার পালা, এই নাটকীয়তার শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুন : মাইক্রোবাসে তুলে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে তরুণীকে কবরস্থানে নিক্ষেপ