আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে ব্যালট পেপারে হচ্ছে ভোট গ্রহণ। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ২ লাখ মেশিন কেনার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকট বিবেচনায় এ প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এ জন্য নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসির হাতে যেসব ইভিএম রয়েছে তা ব্যবহার করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন, ইসির হাতে ব্যবহার যোগ্য যে সব ইভিএম রয়েছে, তা দিয়ে ৫০-৬০ আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে সেই সিদ্ধান্ত আগামী মাসে আসতে পারে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইভিএমের কোয়ালিটি চেক করছে। ইতোমধ্যে ইসির ১০টি অঞ্চলের মধ্যে পাঁচ অঞ্চলের কিইউসি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তা দিয়ে ২৫ আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ১০ অঞ্চলের কিইউসি হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকটের বিবেচনায় ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার নতুন প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম গতকাল সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান। এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত পেয়েছি। এ মুহূর্তে প্রকল্পটি তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ করছে না। বাতিল হচ্ছে না, তবে এ মুহূর্তে হচ্ছে না।’ তবে ইসির হাতে এই মুহূর্তে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০-৬০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলবে বলে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য।
প্রকল্পটি স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ইভিএম প্রকল্পটির বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপতত প্রক্রিয়াকরণ না করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ইসির সচিব বলেন, ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যা সম্ভব, তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত রয়েছে, তা বহাল রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫০-৬০ আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে।
৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ইভিএম ক্রয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছরের অক্টোবরে এই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন রবিবার বিকালে ইভিএম নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে জানায়। গতকাল নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাল। প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনাও হোঁচট খেল।
ইভিএম প্রকল্প স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমাদের কাছে যতগুলো কার্যক্ষম ইভিএম আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করব, এ লক্ষ্যে মজুদ থাকা ইভিএমের কোয়ালিটি চেক করা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সবকিছুই রোডম্যাপ অনুযায়ী করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশন ৫০০-এর বেশি নির্বাচন ইভিএমে করেছে, বিশ্লেষণ করে অনুধাবন করেছে যে ইভিএমে কোনো প্রকার কারচুপি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াই ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রার্থীরা ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কোনো প্রকার অভিযোগ করেনি। এ জন্য অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। অনেক সাধের সঙ্গে সাধ্যের সমন্বয় হয় না, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় ইসি হতাশ কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাকালীন সময়ে বিবেকবান, বিশ্লেষণধর্মী এবং দূরদর্শী চিন্তা সম্পন্ন যে কোনো অথরিটিই এমন সিদ্ধান্তটি নিতেন বলে আমার মনে হয়। আহসান হাবিব খান বলেন, প্রকল্প স্থগিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হলো। বিশিষ্ট নাগরিকদের যে ইচ্ছা ছিল সেটাও বাস্তবায়িত হলো। এটাও কিন্তু আমাদের জন্য তৃপ্তির বিষয়, আমরা আশা করব তারা সবাই মিলে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, এখন আমরা মনে করি দল মত নির্বিশেষে বর্তমান সিদ্ধান্ত পছন্দ করবে। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সহযোগিতা করবে। ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটেও নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব সেটা প্রমাণ করব ইনশা আল্লাহ।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় প্রায় ২৫০ আসনে কাগজের ব্যালটে ভোট হতে পারে এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাকি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত কবে পাওয়া যাবে, সে জন্য অপেক্ষা করছে ইসি সচিবালয়। ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে। ৩ লাখ ২ হাজার ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী পাওয়া গেছে। বেশ কিছু ব্যালট বাক্স ভেঙে গেছে। যা আগে তা দিয়ে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট নিতে প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি ইভিএম প্রয়োজন হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি বিবেচনায় রেখে প্রতি কেন্দ্রের জন্য মোট কক্ষের অর্ধেকসংখ্যক ইভিএম অতিরিক্ত সংরক্ষণ করা হয়। তাই ইসির হাতে যেসব ইভিএম আছে তা দিয়ে ৫০-৬০ আসনে ভোট করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন : ঠিকাদারের ভুলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগ বাড়ছে নাগরিকের