দেশের প্রথম মেট্রো রেলের দ্বিতীয় অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে খুঁটি নির্মাণ কাজ। বর্তমানে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মেট্রো রেল বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে এই নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। এরপর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যাত্রীদের জন্য উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
আরো পড়ুন : ‘বাবু চুনীলাল দেওয়ান সেতু’ নামের পরিবর্তে বীরশ্রেষ্ঠ ‘আব্দুর রউফ সেতু’ নামকরণের দাবি
সরেজমিনে কমলাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। এক মিটার পর পর নেওয়া হচ্ছে মাটির নমুনা। এই নমুনা থেকে মান পরীক্ষা করে খুঁটি বসানোর জায়গা নির্ধারণ করা হবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলেছে, রেলপথের চূড়ান্ত নকশা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেট্রো রেলের মতিঝিল স্টেশন থেকে শাপলা চত্বর দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে কমলাপুরে পৌঁছাবে এই রেললাইন। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের জন্য বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এই পথে ভাঙা পড়বে ৪৬টি ভবন।
কমলাপুর স্টেশন থেকে ৩০ মিটার পশ্চিমে কমলাপুর রেলওয়ে জামে মসজিদ বরাবর নির্মাণ করা হবে মেট্রো রেলের কমলাপুর স্টেশন। এটি হবে এই পথে ১৭ নম্বর এবং সর্বশেষ স্টেশন। এই স্টেশন নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে এ অংশের নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পের এই অংশের মধ্যেই মালিবাগ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত আউটার সার্কুলার সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলবে।
আরো পড়ুন : চট্টগ্রামের পাহাড়ে র্যাবের অভিযানে আট অপহরণকারী গ্রেফতার
ডিএমটিসিএলের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিক কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে মূল কাজের প্রস্তুতি। আগামী মাস থেকে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। রেলপথ নির্মাণ, রেললাইন বসানো, বিদ্যুৎ সংযোগ, বিদ্যুত্ স্টেশন নির্মাণ—এসবই অবকাঠামো নির্মাণের অংশ। ফলে ওই সময়ের মধ্যে সব কিছু প্রস্তুত করা হবে। এর পর ধাপে ধাপে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো পথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মেট্রো রেলের নথির তথ্যানুযায়ী, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশ নির্মাণকাজের জন্য গত বছর ২৮ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আটটি প্যাকেজে নির্মাণকাজ চলছে। সে ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি প্যাকেজ যুক্ত হতে পারে।
আরো পড়ুন : বিএনপির দুর্নীতি আর গণমাধ্যম নিয়ে জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস
রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১২ সালে মেট্রো রেলের এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) আর পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। তবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে মতিঝিল থেকে বাড়িয়ে মেট্রো রেল কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেট্রো রেলের অগ্রগতির প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, উত্তরা-মতিঝিল অংশের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯২.৫২ শতাংশ। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৯৮.৭৫ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯১.০২ শতাংশ। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৭.৭৯ শতাংশ।
আরো পড়ুন : দিনাজপুরের সব কয়টি আসনে আবারও জয় চায় আওয়ামী লীগ, ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এ নিয়মিত চলাচল করবে ২০ সেট ট্রেন। প্রতি সেটে দুই পাশে দুটি ইঞ্জিনসহ (লোকোমোটিভ) থাকবে ছয়টি কোচ। তবে আরো চার সেট ট্রেন চলাচলের জন্য বিকল্প হিসেবে সব সময় ডিপোতে প্রস্তুত রাখা হবে। এসব ট্রেন জাপানে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, চলতি বছরের জুনের মধ্যে ২৪ সেটের সব ট্রেন দেশে পৌঁছে যাবে। এ বছরই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে মেট্রোতে যাত্রী পরিবহন করা হবে। তখন সব ট্রেন নিয়মিত চলাচল করবে।
আরো পড়ুন : মাসে ৩৭ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, শীর্ষে ঢাকা, ছাত্র থেকে ছাত্রী বেশি