কূটনৈতিক প্রতিবেদক : নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশও আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক নিবিড় করতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসে ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা ম্যাকডোনাল্ড। উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের এই সফরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মতো বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধির সফরের পর এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের পৃথকভাবে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের অংশীদারত্ব সংলাপ হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক এইচ শোলে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় আসছেন। আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ডেরেক শোলে মূলত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ নীতিগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
কূটনীতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জানুয়ারিতে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের পর ডেরেক শোলের সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আগামী এপ্রিলে ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের আগে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বুঝতে চাইবেন ডেরেক শোলে।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, ডেরেক শোলের সফরে মূলত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এবং মানবিক সহায়তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ডেরেক শোলে ঢাকায় আসার আগে তাঁর প্রতিনিধিদলের একাংশ ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসবেন। বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখবেন এবং নানা অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর তাঁরা শোলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে যুক্ত হবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ডেরেক শোলের ১৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সূচি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডেরেক শোলের সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই সাক্ষাৎ শেষ পর্যন্ত হবে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সফরের সময় ভাসানচর এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কীভাবে মিয়ানমারের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া যায় এবং রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন নিয়েও আলোচনা করবেন ডেরেক।
তবে ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, শোলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অগ্রাধিকার দিলেও দুই দেশের সম্পর্কের ব্যবসা, বিনিয়োগসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়েও বাংলাদেশ আলোচনা করবে।
ঢাকার কর্মকর্তারা মনে করেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় কারা ম্যাকডোনাল্ডের সফরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান শ্রম আইনের অনেক ধারা কার্যকর নয়। সারা দেশের শ্রমিকদের জন্য যাতে একই আইন কার্যকর হয়ে, সে বিষয়টি আবার আলোচনায় তুলতে পারেন কারা ম্যাকডোনালড। পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রমমান, সংগঠন করার অধিকার, কাজের পরিবেশের মতো বিষয়গুলোতে আলোচনা করবে দুই দেশ।
আরো পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো মিয়ানমার থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করছে