দিনের পর রাত আসে। রাতের পর সকাল হয়। পুনরায় আবার দিন আসে। এভাবে দিন গড়িয়ে মাস শেষ হয়। মাসের পর বছর আসে। তবে ভালো সময় আসে না মাঝিদের। সব স্তরের পেশাজীবীদের জীবনের পরিবর্তন এলেও বদলায়নি শুধু বুড়িগঙ্গার মাঝিদের দিন। দশকের পর দশক এভাবে তিন দশক পার করে দিয়েছেন মাঝিরা। খেয়ে না খেয়ে এখনো চলছে তাদের সেই আগের মতোই মানবতার জীবনযাপন। সামান্য আয় দিয়ে কোনোভাবেই চলছে না জীবন সংসার। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন মাঝিরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে পার করছেন দিন। রাজধানীর সদরঘাটে বুড়িগঙ্গায় নৌকা চলাচল করে এমন তিনটি ঘাট রয়েছে। ঘাটগুলো হলো ওয়াইজঘাট, তেলঘাট, লালকুঠিঘাট। এ তিনটি ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং যাতায়াতে বেশি লোক হয় ওয়াইজঘাটে। মাঝিরা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু নৌকা আছে যারা শুধু ৩০ টাকার বিনিময়ে রিজার্ভে নিয়ে যাত্রী পারাপার করে, আবার কিছু নৌকার মাঝি রয়েছেন যারা শুধু মালামাল আনা-নেওয়া করেন বাড়তি টাকার আশায়। তবে আমরা বেশির ভাগ মাঝি যাত্রীপ্রতি ভাড়া পাঁচ টাকা করে ছয় থেকে আটজন যাত্রী নিয়ে নদী পারাপার করি।
দুই পাড়ে ঘাটের ইজারাদারের একবার আসা-যাওয়ার পথে দুই, চার, পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে মালামাল পরিবহনে ৫০, ১০০ টাকা পর্যন্ত ঘাটের ইজারা দিতে হয়। বরিশালের আবদুল কাদের মাঝি বলেন, ‘১০ বছর ধরে নৌকা বেয়ে বুড়িগঙ্গায় কাটায়ে দিলাম। জীবনের বাকি সময়টাও এখানে কাটাতে চাই। টাকা-পয়সা বড় ব্যাপার না। বাপ-দাদার কাজটা করে কোনোমতে জীবন পার করে দিচ্ছি। কষ্ট হয় মাঝেমধ্যে পরিবার নিয়ে চলতে। তার পরেও পেশাটা বেছে নিয়েছি। দেশে কত কিছু হচ্ছে, তবে আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, আমাদের জন্য কোনো কিছু করে না কেউ।’
আরো পড়ুন : উপহারের গাড়ি নিয়ে বিপাকে হিরো আলম