অতিরিক্ত দামের কারণে ঈদ কেনাকাটায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে

অর্থনীতি প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

অনেকেই রমজান মাসের শুরুর দিকে ঈদের কেনাকাটা করে ফেলেন। এতে মার্কেটে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে যেমন স্বস্তিতে কেনাকাটা করা যায়, তেমনি দামও একটু কম থাকে। কিন্তু প্রায় সব দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে বিপণিবিতানগুলোয় এ বছরের চিত্র একটু ভিন্ন। ক্রেতার ভিড় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলেও অতিরিক্ত দামের কারণে হতাশ হয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার প্রথম সাত দিনে কোনো কোনো দোকানে বউনিও হয়নি। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা সমাগম একটু বাড়লেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। ব্যবসায়ীরা যেহেতু বেশি দাম দিয়ে এবার পণ্য উঠিয়েছেন, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে গিয়ে মানুষের মোটামুটি ভিড় দেখা যায়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেকেই এসেছিলেন ঈদের কেনাকাটা করতে। পুরান ঢাকার নাসিরউদ্দিন সরদার লেন থেকে শামসুন্নাহার লাকী একমাত্র মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছিলেন। লাকী বলেন, ঈদের কেনাকাটা সব সময় রাজধানী সুপারমার্কেট থেকে করি। এবার মৌচাক মার্কেটে এসেছি। তবে জামা, জুতার দাম এত বেশি যে কেনার অবস্থা নেই। তাই একটি পোশাক কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

একই মার্কেটে ১৩ বছর ধরে স্বরলিপি ফ্যাশনের সেলস ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন আব্দুর রহমান রতন। তিনি বলেন, করোনাকাল ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে গত তিন বছর ঈদে আশানুরূপ মুনাফা হয়নি। এ বছর অনেক আশা ছিল। অথচ রোজার প্রথম ছয় দিনে বউনি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। আরেক বিক্রয়কর্মী নাহিদুর রহমান বলেন, গত শীতের সময়ও ভালো বিক্রি হয়েছে। অথচ রোজা শুরু হয়ে গেলেও এখন মানুষের মধ্যে কেনাকাটার ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা এখন আর আগের মতো নেই।

রাইসা ও ঋদমকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তাদের মা-বাবা। দেড় বছর বয়সী রাইসার জুতার দাম দিতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। তার বাবা মো. সোহাগ বলেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে, যা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কোনো রকম খেয়েপরে বাঁচতে পারলেই হয়। ঈদের আনন্দ এখন আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে নেই। দুই সন্তানের জন্যই কেনাকাটা করছি।

রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন এবং নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোতেও এদিন ক্রেতার উপস্থিতি চোখে পড়েছে। বেশিরভাগ ক্রেতা গজ কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন। নীলক্ষেত থেকে চাঁদনী চক মার্কেটে গজ কাপড় কিনতে এসেছেন সাফিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, এবার বড় দোকান থেকে বেশি দামে পোশাক কিনতে পারব না। তাই গজ কাপড় দিয়ে দর্জিবাড়ি থেকে পোশাক তৈরি করে নেব। এখানে তুলনামূলক কম দামে কাপড় পাওয়া যায়। পাশাপাশি ছেলেদের জন্য শার্ট কিনে নিচ্ছি।

বিলাসবহুল বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্কের চিত্র একটু ভিন্ন। একই ছাদের নিচে সব পণ্যের সমাহার থাকায় এই দুই মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া ক্রেতাদের অধিকাংশ বেশ সামর্থ্যবান। তারপরও বিক্রি কম বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। যমুনা ফিউচার পার্কের ইয়োইয়োসো শোরুমের ম্যানেজার আফসানা মিমি রুপা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ঈদ কেনাকাটার আনন্দে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া এখন মাসের শেষ। তাই ক্রেতা উপস্থিতি কম। বেতনের পরে উপস্থিতি বাড়তে পারে।

ইনফিনিটির সুপারভাইজার মিঠুন দাস বলেন, ক্রেতার উপস্থিতি মোটামুটি কিন্তু বিক্রি বেশ কম। রোজার আগে প্রতিটি পণ্যের যে দাম ছিল, এখনও তাই আছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাজেট এবার কম। গত বছর রোজায় এর চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতা ও বিক্রি ছিল।

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের আড়ং শোরুমে গতকাল ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানে কলাবাগান থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন মো. জামিল। ছেলে ও নিজের পাঞ্জাবি পছন্দ হলেও বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোতে মানুষের চাপ বেশি কারণ পোশাকের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। একই সঙ্গে থাকে ডিজাইনের ভিন্নতা। কিন্তু এবার কাপড় ও ডিজাইন বিবেচনায় পাঞ্জাবির দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।

এদিকে ঈদ সামনে রেখে এবারও আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া পোশাক নিয়ে প্রস্তুত দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় বুটিক হাউসগুলো এরই মধ্যে ট্রেন্ডি ও ট্রেডিশনাল লুকের পোশাক তুলেছে। তবে সুতা, রঙ, কাপড়সহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে এবার দেশীয় পোশাক কিনতেও খরচ হবে বাড়তি টাকা। ব্যবসায়ীরা স্বীকার করছেন, গত বছরের চেয়ে এবার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি দামে সবাইকে পোশাক কিনতে হবে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শিশুদের পোশাকের।

আরো পড়ুন : নওগাঁয় জায়গাঁ-জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের মারপিটে মেম্বার নিহত, আটক ৩।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *