সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি বিশেষ গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপে নেওয়া হতো ভয়ংকর মাদক আইসের অর্ডার। এরপর নারী ডেলিভারিম্যান দিয়ে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হতো। এই মাদক ক্রেতাদের বেশির ভাগই রাজধানীর উত্তরা ও এর আশপাশের বাসিন্দা। তবে আইসের চালান আসত কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে। চক্রের হাত বদল হয়ে পৌঁছত রাজধানীতে।
এক কেজি আইসসহ চক্রের একজনকে গ্রেফতারের পর এমনটি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। এর আগে, গত সোমবার রাতে আবদুল্লাহপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকা থেকে ইফতেখার উদ্দিন সাকিব নামে একজনকে গ্রেফতার করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের এক কেজি আইস ও মাদক বিক্রিতে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, বিভিন্ন সময়ে আইসের অল্প অল্প চালান জব্দ করা হয়েছে। তবে এটি বড় চালান। একসঙ্গে ১ কেজি আইসসহ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার সাকিব টেকনাফের প্রাসিস্কো ব্লা নামক এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিক্রি করত। প্রাসিস্কো ব্লা মূলত একটি ছদ্মনাম। এই নামের ব্যক্তি বাংলাদেশি হলেও গ্রেফতার এড়াতে ছদ্ম নাম ব্যবহার করত।
সাকিব প্রায়ই টেকনাফের ওই মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এভাবে মাদকের চালান এনে ঢাকায় পৌঁছে দিত। ঘটনার দিন সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে পলওয়েল কারনেশন সেন্টারের সামনে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। রাত ১১টার দিকে পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে এক ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় সাকিবকে আটক করা হয়। পরে তার সঙ্গে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগ তল্লাশি করলে এক কেজি আইস পাওয়া যায়। গ্রেফতার সাকিবের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
তিনি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে বসবাস করে সেখানে একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র গড়ে তোলেন। সন্দেহ এড়াতে তিনি ও চক্রের লোকজন মবিলের কার্টুনের ভিতরে মাদক পরিবহন করতেন। তাদের একটি স্পেশাল মেসেঞ্জার গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের সদস্যরা মাদকের জন্য অর্ডার করত। পরে নারী ডেলিভারিম্যান দিয়ে মাদক পৌঁছে দিত। ওই মেসেঞ্জার গ্রুপের যারা সদস্য এবং যারা মাদকের জন্য অর্ডার করত, তাদের বেশিরভাগই উত্তরা ও এর আশপাশের বাসিন্দা। যারা মাদকের অর্ডার দিত এবং যে সব নারী মাদক পৌঁছে দিত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। সাকিব দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হননি। তার বিরুদ্ধে মামলার তথ্যও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সাকিবের বিরুদ্ধে উত্তরা-পূর্ব থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবে পুলিশ।