অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে পলাতক স্বৈরাচারের লোকেরা ওত পেতে আছে

জনপ্রতিনিধি তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ প্রবাস মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এই সরকারের কর্মকান্ড ব্যর্থ করার জন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলাতক স্বৈরাচারের লোকেরা ওত পেতে আছে, কীভাবে এই সরকারকে ব্যর্থ করা যায়।

গতকাল বিকালে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব)-এর তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকালে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এই কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে ফখরুল আলমকে সভাপতি ও রুহুল আমিন আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারসহ জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বক্তব্য দেন।
তারেক রহমান বলেছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তে মনে হয়, তারা জন-আকাক্সক্ষাকে ভ্রুক্ষেপ করতে বোধ হয় চাইছে না। যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই হয়তো তারা চাপিয়ে দিতে চাইছে। অনেক অপ্রাপ্তি থাকার পরও জনগণ এখনো এই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সরকার কি আদৌ জনগণের আস্থা রাখতে চায়? তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ষড়যন্ত্রে ডালপালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। আন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ ন্যূনতম যে জিনিসগুলো চাইছে, সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করলে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পাবে না। তবে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি অদক্ষতা দেখতে পায়, সেটাও কিন্তু জনগণ মেনে নেবে না।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এই সরকারের কর্মকান্ড ব্যর্থ করার জন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলাতক স্বৈরাচারের লোকেরা ওত পেতে আছে, কীভাবে এই সরকারকে ব্যর্থ করা যায়। কারণ এই সরকারকে যদি ব্যর্থ করে দেওয়া যায়, তাহলে গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, গণতন্ত্র চর্চা করতে চায়- তাদের ব্যর্থ করে দেওয়া যাবে। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এই দুটি বিষয় যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সংস্কার কোনোটাই টেকসই হবে না। একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে, তার ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার। জনগণ তাদের ভোট প্রয়োগের অধিকারের সুযোগ যদি না পায়, তখন রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের অংশীদারত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। আমরা দেখেছি, ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করছে, ইনশা আল্লাহ তারা নির্ভয়ে একটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণ নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের। বিশ্বাসযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট আস্থা পেলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। জনগণ যা চায় তাকে অন্তবর্তী সরকার অ্যাড্রেস করলে ওত পেতে থাকা স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। দলের শীর্ষনেতা বলেন, বাংলাদেশই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, একটা দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয়, তাহলে তার অর্থনীতি কীভাবে দুর্বল হয়ে যায়। প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে আহত করে দুই হাজারের মতো ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে পতিত স্বৈরাচার দেশটাকে বিধ্বস্ত করে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে এই অন্তর্বর্তী সরকার। মাফিয়া সরকারের গত ১৫ বছরের তৈরি করা জঞ্জাল মাত্র তিন মাসে দূর করা সম্ভব নয়। তবে তিন মাস পর এই অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিকও নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বিষয় মনে রাখা দরকার- সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি অদক্ষতা দেখতে পায় সেটাও কিন্তু জনগণ মেনে নেবে না। রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সেটিং যদি ভুল হয়, সেটি জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বহু মানুষ চোখ, কান, হাত, পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। আহতরা সুচিকিৎসার দাবি নিয়ে দুই দিন আগেও যেভাবে হাসপাতাল থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, এটা দেশের গণতন্ত্রমনা ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী মানুষ তথা আমাদের বিবেকবান প্রত্যেকটা মানুষের জন্য লজ্জাকর দৃশ্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি কেন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাে র অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল না। কিংবা এটা কত নম্বরে ছিল? আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোর বিষয়টিও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের তালিকার কত নম্বরে আছে? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে এসে দেশের অর্থনীতিতে এখনো অর্জন বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের এবং জনশক্তি রপ্তানির। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই বিশ্ববাজারে এই দুটি সেক্টরের যাত্রা শুরু করেছিল। তারপরে এতগুলো বছরে আরও কিছু পণ্য রপ্তানি হলেও এই দুটি সেক্টরকে অন্য কোনো সেক্টর এখন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারেনি। দেশের অর্থনীতিতে এই দুটি সেক্টরই সামগ্রিকভাবে এখন পর্যন্ত অবদান রাখছে।

আরো পড়ুন : ভারতীয় মার্কিনিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে কাজ করবে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *