অপরিকল্পিত নগরায়নে দিনাজপুরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জনজীবন

অনুসন্ধানী অর্থনীতি ওকে নিউজ স্পেশাল ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ শিল্প প্রতিষ্ঠান

শাহ্ আলম শাহী, স্টাফ রিপোর্টার,দিনাজপুর থেকেঃ দিনাজপুরে নীতিমালা লঙ্ঘন করে দেদারসে নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন। নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিধিমালা উপেক্ষা করে শহরের অলিগলি ও শহরতলিতে বনায়ন ও জলাশয়-খাল-বিল ধবংস করে এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইমারত নীতিমালা লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত নাগরায়ন গড়ে ওঠায় একদিকে যেমন পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে,তেমনি বসবাসের অযোগ্য হয়ে জীবনের ঝুকিতে নিরাগত্তাহীনতায় ভুগছে,শহরবাসী। বিধিমালা লঙ্ঘন করে নির্মিত বেশকিছু ভবনের বিরুদ্ধে নানা মহলে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা,গণপূর্ত, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন নড়েচড়ে বসেছে।
নেই পরিবেশ অধিদপ্তর,ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রও। নেই পৌরসভার নকশার অনুমোদন। কেউ নকশা জমা দিলেও তার সঙ্গেও মিল নেই নির্মাণাধীন ভবনের। তারপরও মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে গেছে অসংখ্য ভবন। ইমারত নির্মাণ নীতিমালা উপেক্ষা করে এভাবেই দিনাজপুরে গড়ে উঠছে,অপরিকল্পত নগরায়ন। অসংখ্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন।এতে একদিকে যেমন পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে,তেমনি বসবাসের অযোগ্য হয়ে জীবনের ঝুকিতে নিরাগত্তাহীনতায় ভুগছে,শহরবাসী।


দিনাজপুর শহরের কালিতলা এলাকার স্কুল শিক্ষক দেবাশীষ জোয়ার্দার দিনাজপুর পৌরসভায় এমনি অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পায়নি সে। তার বাড়ির দেয়াল ঘেষে মমতাজুল আলী নামে এক বিল্ডাস পৌরসভার নকশাবহির্ভূত ‘সানমুন টাওয়ার’ বহুতল ভবন নির্মাণ করায় তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির ঘরের দেয়াল পর্যন্ত ফেটে ও ধবসে গেছে। জীবন বাঁচাতে ভিটেবাড়ি ছেড়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে।প্রায় তিনবছর থেকে পৌরসভায় বেশ দফায় দফায় অভিযোগ দিছের কোন সুফল পায়নি তিনি। তাকে প্রতিনিয়ত ঘুরিয়ে হয়রানী করেছে,পৌরকর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঊহৃ হয়নি,বিল্ডাস মমতাজুলের নির্মাণ কাজ। এখন তা বহুতলায় উঠেছে।
একই অভিযোগ,বালুবাড়ী পশুহাসপাতাল মোড় সংলগ্ন লতু মিয়ার। তার বাড়ি সংলগ্ন ‘এসএ টাওয়ার’ নামে বহুতল ভবন নির্মঠু করছেন,মমতাজুল আলী নামে ওই বিল্ডাস। পৌরসভার নকশাবহির্ভত বহুতল এই ভবন নির্মাণ করায় লতু’র অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে তিনিও অভিযোগ দিয়েছেন।
তনুজা শারমীন নামে একজন পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনসহ বেশকিছু দপ্তরে অভিযোগ করেছেন, মমতাজুল আলী নামে ওই বিল্ডাস তার জায়গায় ‘জিলানী টাওয়ার’ নামে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করলেও তা পৌরসভার নকশাবহির্ভূত ভাবে করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না তাতে।


অন্যদিকে শহরের গণেশতলায় ‘ক্যাপ্টেন টাওয়ার’ নামে একটি বহুতলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে।পৌরসভার নকশাবহির্ভূত এই ভবন নির্মাণ করায় আশপাশের অইেশ ব্যাক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়েছে,ওই বিল্ডাস হাশেম আলী। ব্যাক্তি মালিকানাধীন বেশকয়েক জনের রাস্তার উপর দিয়ে ওই টাওয়ারের রাস্তা ব্যবহার করারও অভিযোগ উঠেছে।
বনায়ন, জলাশয়-খাল-বিল ও প্রতিবেশ ধবংস করে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ,অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে,কয়েকজন বিল্ডাসের বিরুদ্ধে।এসব ভবন ফ্ল্যানের নির্ধারিত ফ্লোর বা তলা ডিঙিয়ে ওপরের দিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফ্লোর বর্ধিত করেছে এবং আশপাশে জায়গা না রেখেই ভবন নির্মাণ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেকেই।
পৌর কর্তৃপক্ষ এমন বেশকিছু ভবনকে লাল তালিকাভুক্ত করে নির্মাণ কাজ বন্ধের নোটিশ দিয়েছে। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত ভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন,অনেকেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিল্ডাস মমতাজুল আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,পৌর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই সব কাজ চলছে। এবিষয়ে সাংবাদিকদের কিছুই জানাতে নারাজ বলে তিনি দম্ভোক্তি করেন।
বিল্ডাস হাশেম আলী জানান,তার পার্টনার বিল্ডাস মমতাজুল আলী’র জন্যে তার ক্ষতি হয়েছে। মমতাজুল পৌরসভার নকশাবহির্ভূত নির্মাণ কাজ শুরু করায় আশপাশের অনেকের ক্ষতি হয়েছে। তবে,বর্তমানে তারা মমতাজুলকে শেয়ার থেকে বাদ দিয়েছেন বঔের জানান, হাশেম আলী।


দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, নীতিমালা ও নকশাবহির্ভূত এবং অনুমোদনহীন আরো বেশকিছু ভবনকে লাল তালিকাভুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বধিমালা লঙ্ঘন করে নির্মিত বেশকিছু ভবনের বিরুদ্ধে নানা মহলে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা,গণপূর্ত, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন নড়েচড়ে বসেছে।
কেউ নতুনভাবে ভবন নির্মাণ করতে চায়লে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ সালের ৩ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির পেছনে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি ও বাড়ির উভয় পাশে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি করে জায়গা ছাড়তে হবে। অর্থাৎ দুইটি বাড়ির মাঝে দূরত্ব থাকবে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। এবং ভবনের সম্মুখভাগে ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি জায়গা ছাড়া থাকতে হবে। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনটাই ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। বিল্ডিং কোড ও সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই নির্মিত হচ্ছে এসব ভবন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। নীতিমালাবহির্ভূতভাবে নির্মিত এসব ভবনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রহস্যজনক কারণে নির্মাণের শুরুতে এসব ভবন নিয়ে পদক্ষেপ না নেয়া অভিযোগ রয়েছে।
অপরিকল্পিত নাগরায়নের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে,তেমনি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে,জনজীবন। তাই ইমারত বিধি লঙ্ঘনকারিদেও বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশপাশি জনসচেতনতারও তাগিদ দিচ্ছেন, পরিবেশবিদ ও ইমারত বিশেষজ্ঞরা।
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *