অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে জামালপুরে সরিষাবাড়ীর কয়েকটি বধ্যভূমি

প্রচ্ছদ মুক্তমত মুক্তিযুদ্ধ হ্যালোআড্ডা

বাঙালি জাতির মহাগৌরবের অবিস্মরণীয় ইতিহাস ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম বিসর্জনে অর্জিত হয়েছে এ মহান স্বাধীনতা। সেই মহান বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলায় বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি।

এসব বধ্যভূমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ধারণ করে আজও কালজয়ী সাক্ষী হয়ে নিশ্চল। তবে এগুলোর নেই কোনো স্বীকৃতি ও সংস্কার। তাই অনাদৃত এসব বধ্যভূমির স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সরিষাবাড়ী উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ১০-১২টি বধ্যভূমি রয়েছে। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে এগুলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নয়, বরং সাধারণ মানুষের কবর হিসেবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপজেলার পোস্ট অফিসসংলগ্ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বর, শহীদনগর, সাঞ্চারপাড়, কান্দারপাড়া ও পারপাড়া গ্রামে অবস্থিত এসব বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্নটুকু খুঁজে পাওয়াই আজ দুষ্কর। অনেক বধ্যভূমি ঢেকে গেছে ঘাস আর লতাপাতায়।

উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলার আরামনগর আলিয়া মাদ্রাসা, হাসপাতালের উত্তর-পশ্চিমে, রেলওয়ে ব্রিজ,পারপাড়া গ্রামে, জগনাথগঞ্জ ঘাট, মূলবাড়ী ব্রিজ, চান্দাদীঘি, মুনারপাড়া রেলওয়ে ব্রিজ, কুইচ্চামারা ব্রিজ, জোজিয়া চর ও শহীদ নগরসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন মুক্তিযোদ্ধারা।

সারা দেশে এমন হাজারো স্থানে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অগণিত স্বাধীনতাকামী মানুষ দিয়ে গেছেন প্রাণ। যাদের খবর এখনো অগোচরে। ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো খোঁজখবর, করা হচ্ছে না সংস্কার ও সংরক্ষণ। তাই আজও সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে অপ্রাপ্তির বেদনায় নীরবে কাঁদেন বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে থাকা শহীদদের স্বজনরা।

আক্ষেপ করে তারা বলেন, স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজও কোনো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে কত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়, অথচ এসব বধ্যভূমি কবর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণ করা হয় না।

বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে থাকা শহীদদের স্বজনদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের অসহায় নিরীহ মানুষদের মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর সন্দেহে ধরে নিয়ে যায় এবং অমানবিক নির্যাতন করে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। তারপর লাশগুলো সেখানেই মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। এ সকল প্রাণের অবদান সংরক্ষণ করা না হলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসব জানতেও পারবে না।

তাই স্বাধীনতার সত্য ইতিহাসকে উজ্জীবিত করে রাখতে এসব বধ্যভূমি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি বলে মনে করছেন উপজেলা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্বজনরা।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ ও সৈয়দুজ্জামান বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য অতিদ্রুত বধ্যভূমিগুলোকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা আবশ্যক। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে তাদের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে হবে। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজ বধ্যভূমিগুলো অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে, এমনটা দেখা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সকল স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে।

বধ্যভূমি সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী আসনের এমপি ডা. মুরাদ হাসান বলেন, আমি এর আগেও একাধিকবার এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো সংস্কার করেছি এবং সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন ও দলীয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করেছি। বর্তমানে সরিষাবাড়ী উপজেলায় যেসব বধ্যভূমি সংস্কারের প্রয়োজন আছে, আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে অতিদ্রুত সংস্কারের আওতায় নিয়ে আসব। কারণ আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সরিষাবাড়ীতে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘ সাত মাস ১৮ দিন বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে ১২ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত করে সরিষাবাড়ী।

আরো পড়ুন : মানিকগঞ্জের ঘিওরে রেলিং ছাড়া সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজারো মানুষ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *